মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার ৪ বছরের জেল

অকস্মাৎ মাথা নিচু করলেন জে. জয়ললিতা। কালো হয়ে গেল তার মুখ। যেন স্থবির হয়ে পড়লেন কিছু সময়ের জন্য। তার বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু’র এক আদালত দুর্নীতির দায়ে ৪ বছরের জেল ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ১০০ কোটি রুপি জরিমানা করা হয়েছে। কারাভোগের পর ৬ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না। এর মধ্য দিয়ে (৪+৬) দশ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হলেন তিনি। এ সাজা ভোগের পর তার যে বয়স হবে তখন তিনি ৭৬ বছরে পৌঁছাবেন। এ বয়সে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গতকাল রায় ঘোষণার পর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন। তাকে রাখা হয়েছিল পুলিশ হেফাজতে। তিনি তামিলনাড়ু রাজ্যের ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে এমন রায়ে তিনি হতচকিত।  রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তার রাজ্যে সমর্থকরা ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এক সমর্থক গায়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে। নেতাকর্মীরা বিজেপি নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ করে। বিরোধী বিজেপি প্রধান ও মামলার বাদী সুব্রামনিয়ান স্বামীর বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। অনেক স্থানে জয়ললিতার এআইএডিএমকে দল ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। লাঠিচার্জ করেছে। এ সময় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন কারখানা ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি এক নাজুক অবস্থা ধারণ করে। ১৮ বছর আগের মামলায় গতকাল জয়ললিতার বিরুদ্ধে ওই রায় দেয়া হয়। গতকাল ব্যাঙ্গালোরের আদালত তার উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করে। অভিযুক্ত হয়ে সাজা পাওয়ায় তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করতে হবে এখন। তবে জয়ললিতা এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করবেন। মামলায় হাজিরা দিতে জয়ললিতা গতকাল সকালে চেন্নাই থেকে বেঙ্গালুরু যান বিমানযোগে। সেখানে কেন্দ্রীয় জেলখানায় তৈরি করা একটি আদালতে মামলার শুনানি হয়। ১৮ বছর আগে তার বিরুদ্ধে এ মামলা করেন সুব্রামানিয়ান স্বামী। তিনি বর্তমানে বিজেপি’র একজন নেতা। জয়ললিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ রুপির দুর্নীতি করেছেন। এ অভিযোগে তার সঙ্গে সঙ্গে আরও অভিযুক্ত হয়েছেন তার তিন সহযোগী- এন. শশীকলা, জে. এলাবারাসি এবং ভিএন সুধাকরণ। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০ (বি), দুর্নীতি বিরোধী আইনের ১৩ (১) ধারার অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিচারক মাইকেল ডি’কুনহা তাদের বিরুদ্ধে এ রায় দেন। গতকাল এ রায় প্রকাশের পর ভারতের মিডিয়াগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। কোন কোন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের নিয়মিত সম্প্রচার স্থগিত করে এ বিষয়টি প্রাধান্য দেয়। জয়ললিতার বয়স এখন ৬৬ বছর। তিনি ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সেখানে তার দীর্ঘ বিচরণ। এর ফলে তৈরি হয়েছে তার সমর্থকগোষ্ঠী। এরপর যোগ দেন রাজনীতিতে। রাজনীতিতে এসে তিনি বড় একটি জায়গা করে নিয়েছেন নিজের জন্য। হয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালে স্বল্প সময়ের জন্য ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একই পদে আসীন ছিলেন। ১৮ বছর আগে জয়ললিতার বিরুদ্ধে মামলা হলেও ডিএমকে ক্ষমতায় এসে তা আমলে নেয়। তারা জয়ললিতার বিরুদ্ধে মামলাটি সামনে এগিয়ে নেয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি প্রথম দফায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অসাঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ উপার্জন করেছেন। প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, তিনি যখন প্রথম দফায় মুখ্যমন্ত্রী হন তখন মাত্র এক রুপি বেতন নিয়েছিলেন। কিন্তু তার এ ক্ষমতার মেয়াদে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ আয় করেছেন। এর পরিমাণ কমপক্ষে ৬৬ কোটি রুপি। এর মধ্যে রয়েছে ২০০০ একর জমি, ৩০ কেজি স্বর্ণ ও ১২০০০ শাড়ি। জয়ললিতার দাবি, এ মামলা রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেয়ার জন্য করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে তার যেসব সম্পদ ছিল প্রসিকিউশন তা কম করে দেখিয়েছে। অন্য যে সব উৎস থেকে তিনি আয় করেছেন সেগুলোকে তারা অন্তর্ভুক্ত করেনি। তার সহায়-সম্পদের দাম যে বৃদ্ধি পেয়েছে তা এড়িয়ে গেছে। এ বছর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তার দল এআইএডিএমকে রাজ্যে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। লোকসভার ৩৯টি আসনের মধ্যে তারাই জিতে নেয় ৩৭টি আসন। জয়ললিতার বিরুদ্ধে মামলাটি ২০০১ সালে স্থানান্তরিত হয় বেঙ্গালুরু’র আদালতে। ওই সময়ে জয়ললিতা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন। বিরোধী ডিএমকে’র এক নেতা তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, যেহেতু রাজ্যে ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে, তাই সেখানে সুবিচার পাওয়া যাবে না। ফলে আদালত স্থানান্তরিত হয় বেঙ্গালুরুতে। ওদিকে জয়ললিতার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করার পর তামিলনাড়ুর বিভিন্ন স্থানে তার সমর্থকরা রাজপথে নেমে পড়ে। কোয়েমবাটুর-এ সড়কে অবরোধ করে। বিজেপি নেতা সুব্রামনিয়ান স্বামীর বাসভবনের দিকে পাথর ছুড়ে মারে। এক পর্যায়ে চেন্নাইয়ের লয়েড রোডে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।

No comments

Powered by Blogger.