আবারও লাশের অমর্যাদা !

লোকটা যেন রিকশায় বসে আছেন। বাঁশের সঙ্গে বাঁধা বস্তায় ভরা দেহটি, বাঁশের দুই প্রান্ত রিকশার সঙ্গে বাঁধা। তার ওপর আগাগোড়া সাদা কাপড়ে মোড়ানো। কাপড়ের নিচের অংশে (পায়ের দিকে) ছোপ ছোপ কালচে রক্তের দাগ। এভাবেই রিকশায় বেঁধে একটি মৃতদেহ কমলাপুরের রেলওয়ে থানা থেকে আজ রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয়। রিকশা চালিয়ে লাশটি মর্গে নিয়ে আসেন রেলওয়ে পুলিশের অস্থায়ী ডোম বিহারি।

১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজার মাছের আড়তসংলগ্ন রেললাইনে দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে পাঁচজন নিহত হন। এরপর বস্তায় ভরে বাঁশ বেঁধে নিহত একজনের লাশ বহনের ছবি পরের দিন প্রথম আলোতে ছাপা হয়। ছবির ক্যাপশন ছিল ‘জীবনের প্রয়োজনে যিনি ছুটছিলেন দিনরাত, মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ চরম অমর্যাদায় বস্তায় ভরে ছুটছেন রেল পুলিশের ভাড়া করা বাহকেরা।... রেলপথে প্রাণ হারানো মানুষের মরদেহ সরিয়ে নেওয়ার সম্মানজনক কোনো রীতি কি রেল কর্তৃপক্ষের নেই?’ এরপর আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশটি নিয়ে আসার পর লাশ বহনের প্রক্রিয়া দেখে অবাক মর্গের কর্মীরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী বলেন, লাশটি বস্তায় ভরে বস্তার সঙ্গে বাঁশ দিয়ে বাঁধা হয়েছে। এই অবস্থায় রিকশায় বসিয়ে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। লাশ দেখে এখানে সবাই অবাক। অনেকে মুঠোফোনে ছবিও তুলে রাখেন। মর্গে আসার পথে যাঁরাই বিষয়টি দেখেছেন, তাঁরাই একবার করে ঘুরে তাকিয়েছেন।
লাশ বহনের এই প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রেলওয়ে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি। এভাবে বাঁশ দিয়ে বেঁধে রিকশায় বসিয়ে লাশ বহন করা ঠিক হয়নি। মৃত ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান দিয়ে লাশ বহন করা নিয়ম। সারা দেশে সাধারণত ভ্যানগাড়িতে করে লাশ বহন করা হয়। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি কী কারণে এভাবে রিকশায় বসিয়ে লাশ বহন করতে হলো। এর জন্য ডোম না সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা দায়ী তা-ও দেখা হচ্ছে।’
ওই লাশটি উদ্ধারকারী রেল পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, গত শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টিটিপাড়া রেললাইন এলাকায় নারায়ণগঞ্জগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় লাইনে পড়ে আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি নিহত হন। লাইনের ওপর পড়ে ওই ব্যক্তির ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রেল পুলিশ লাশ উদ্ধার করে প্রথমে কমলাপুরে জিআরপি থানায় নিয়ে যায়। এরপর আজ সকালে লাশ মর্গে পাঠানো হয়। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির পরিচয় মেলেনি। তাঁর পরনে ছিল চেক লুঙ্গি ও সবুজ শার্ট।
এএসআই জাহিদুল বলেন, ‘সাধারণত ডোমের দায়িত্বে লাশ পাঠানো হয়। লাশ পরিবহনের জন্য ডোমকে তিনবার ভ্যান কিনে দেওয়া হলেও সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। পরে সেই ডোম না বুঝেই লাশ রিকশায় করে মর্গে নিয়ে যান। এভাবে লাশ বহন অবশ্যই অন্যায় হয়েছে, আমি স্বীকার করছি আমার দোষ হয়েছে। তবে এ রকম আর হবে না। ওসি স্যার ভ্যানের অর্ডার দিয়েছেন, কালকেই চলে আসবে।’

No comments

Powered by Blogger.