আল–কায়েদার চেয়েও জটিল হবে আইএসবিরোধী লড়াই

হেলিকপ্টার থেকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ওপর নজর
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির। আইএসের বিরুদ্ধে দীর্ঘ
প্রতীক্ষিত সামরিক অভিযানে ইরাকের সম্ভাব্য ভূমিকা
নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল অঘোষিত সফরে
সেখানে যান কেরি। ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ
ভূখণ্ড দখলে নেওয়া আইএস পুরো অঞ্চলজুড়ে
উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ছবি: এএফপি
আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানের চেয়েও জটিল হবে ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটবিরোধী (আইএস) অভিযান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এ অভিযানের পরিকল্পনা বিষয়ে অবগত রয়েছেন এমন কর্মকর্তারা বলছেন, এ অভিযান হবে দীর্ঘমেয়াদি এবং ইয়েমেন, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অন্যান্য স্থানে পরিচালিত আল-কায়েদাবিরোধী মার্কিন অভিযানের চেয়েও অনেক বেশি জটিল। ওবামার গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় আজ বৃহস্পতিবার সকাল) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। ভাষণে তাঁর আইএসকে রুখতে নিজের বিশদ পরিকল্পনা প্রকাশ করার কথা। ভাষণের আগে তিনি সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার ওবামা পরিকল্পনা নিয়ে হোয়াইট হাউসে নিজের ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। প্রেসিডেন্ট ওবামা ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন স্থল অভিযানের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে তিনি সেখানে বিমান হামলা সম্প্রসারিত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশলের অংশ হিসেবে সিরিয়ায়ও এখন বিমান হামলা চালানোর অনুমোদনে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র এক মাস ধরে ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে জন কেরি: আইএস রুখতে বৃহত্তর জোট গঠনের মিশন নিয়ে গতকাল মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। জন কেরি গতকাল অঘোষিতভাবেই যান ইরাকের রাজধানী বাগদাদে। ইরাকের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি সেখানে গেলেন। এ ঝটিকা সফরে কেরি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-ইবাদির সঙ্গে বৈঠক করেন। আইএসবিরোধী জোট গড়তে কেরি সৌদি আরবসহ বিভিন্ন আরব দেশ ভ্রমণ করবেন। বিশেষ করে সৌদি আরবের জেদ্দায় গতকালই তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসার কথা। এ বৈঠক দুই দিনব্যাপী চলবে। এতে কেরির পাশাপাশি অংশ নেবেন মিসর ও জর্ডান এবং উপসাগরীয় ছয়টি আরব দেশের মন্ত্রীরা।
মূলত কেরি এসব দেশের কাছ থেকে আইএসবিরোধী লড়াইয়ের জন্য সামরিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায় করার চেষ্টা করবেন। মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরুর আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর এ সফরের লক্ষ্য হচ্ছে আইএসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি টেকসই জোট গঠন করা। যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে তার মিত্রদের নিয়ে গঠিত আইএসবিরোধী কেন্দ্রীয় জোটের নাম ঘোষণা করে, যার নয়টি সদস্য দেশের বেশির ভাগই ইউরোপের। এ জোট আইএস জঙ্গিদের নির্মূলে কাজ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। আল-শামস নেতাসহ নিহত ২৮: উত্তর সিরিয়ায় আইএসের জিহাদিদের অগ্রযাত্রা রুখতে যেসব গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য সমর্থন দিয়ে আসছিল, তাদের অন্যতম হচ্ছে আহরার আল-শামস। মঙ্গলবার ইদলিব প্রদেশে বৈঠক করার সময় এক বোমা বিস্ফোরণে সংগঠনটির প্রধান হাসান আবদ ও সামরিক প্রধানসহ অন্তত ২৮ নেতা নিহত হয়েছেন। এতে সেখানে আইএসের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার প্রচেষ্টা বড় ধাক্কা খেল। বান কি মুনের আহ্বান: জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সিরিয়া যুদ্ধের একটা রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আল-হায়াত পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাশার সিরিয়া যুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করলে তা ওই অঞ্চলে আইএস জঙ্গিদের রুখতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে।

No comments

Powered by Blogger.