রহস্যময় সম্প্রদায় ইয়াজিদি

প্রার্থনা করছে একদল ইয়াজিদি কিশোর–কিশোরী
মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের উত্থানে যেসব গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব পড়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইয়াজিদি নামের একটি জনগোষ্ঠী। এদের কম-বেশি ৫০ হাজার সদস্য আটকা পড়েছেন উত্তর-পশ্চিম ইরাকের পাহাড়ি এলাকায়। রহস্যময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কারণে ইয়াজিদিদের নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আইএসসহ (আগের নাম আইএসআইএল বা ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট) সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিশ্বাস, ইয়াজিদি নামটি এসেছে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নাম থেকে। উমাইয়া বংশের দ্বিতীয় খলিফা (৬৪৭-৬৮৩) ইয়াজিদ অত্যন্ত অজনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ গোষ্ঠীর নামটির সঙ্গে খলিফা ইয়াজিদ বা পারস্যের (প্রাচীন ইরান) শহর ইয়জদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং নামটি নেওয়া হয়েছে আধুনিক ফার্সি ‘ইজদ’ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে দেবদূত বা দেবতা। তা থেকে ইয়াজিদি শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে, ‘ঈশ্বরের উপাসক’।
ইয়াজিদিরা ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন এবং খ্রিষ্টধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেল উভয়কেই শ্রদ্ধা করে থাকে। তাদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রথাগুলোর বেশির ভাগই মৌখিক। এমন ভুল ধারণাও রয়েছে যে ইয়াজিদি মতবিশ্বাস জরথুস্ত্রবাদ (প্রাচীন পারস্য ধর্মীয় বিশ্বাস ও দর্শন, যার অনুসারীরা অগ্নি উপাসক ছিলেন) মতবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যাপ্টিস্ট খ্রিষ্টানদের মতো ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের শিশুদের সর্বাঙ্গ পবিত্র পানিতে ডুবিয়ে দীক্ষা দেন একজন পীর। ডিসেম্বর মাসে ইয়াজিদিরা তিন দিন রোজা রাখে। পরে পীরের সঙ্গে সুরা পান করে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ ইয়াজিদিদের বার্ষিক তীর্থযাত্রার সময়। এ সময় তারা মসুল শহরের উত্তরে অবস্থিত লালেশ এলাকার শেখ আদির মাজারে গিয়ে নদীতে ওজুর মতো করে পবিত্র হয়। এ ছাড়া ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মধ্যে পশু উৎসর্গ করা এবং খতনা দেওয়ার প্রথাও রয়েছে। ইয়াজিদিদের সর্বোচ্চ দেবতার নাম ইয়াজদান। সাতটি মহাত্মার উৎস ইয়াজদান। এর মধ্যে প্রধান মালাক টাউসকে দিনে পাঁচবার উপাসনা করে ইয়াজিদিরা।বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.