এইচএসসির ফলাফলে মেয়েরাই সেরা

গত বছরের এইচএসসির ফলাফলে ছন্দপতন হলেও এবার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এবার গত বছরের তুলনায় গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গত কয়েক বছর পিছিয়ে থাকলেও এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পাসের হার ও জিপিএ-৫ দু’টোতেই শীর্ষ স্থান দখল করেছে। গত বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ দু’টোতেই ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও এবার পাসের হারে মেয়েরা আর জিপিএ-৫ ছেলেরা এগিয়েছে। শতভাগ পাস করার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে কমেছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছর গড় পাশের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। একইভাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বেড়েছে ১২ হাজার ৪০৫। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ১৯৭। সাধারণ ৮টি বোর্ডের চেয়ে মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের ফল ভাল হয়েছে।  এবার শতভাগ পাস করেছে ১ হাজার ১৪৭ টি প্রতিষ্ঠান। গত বছর ছিল ৮৪৯টি। শূন্য পাসের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৪টি। গত বছর ছিল ২৫টি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ভাল ফলের অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে করে এ বছর ফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা বোর্ডের  চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফল হস্তান্তর করেন। 
এবার এইচএসসিতে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৭১ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত বছরের মতো এবারও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার সর্বোচ্চ। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ৪৬। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০২৫ জন যা গত বছর ছিল ৬০০৯ জন। কারিগরি বোর্ডের পাশের হার ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮৫ দশমিক ০৩। গত বছরের চেয়ে এবার দশমিক ১ শতাংশ পাশের হার কমেছে। তবে জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৭৩৫ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৩৯৩ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৪৬৫৮ জন। ঢাকা বোর্ডের অধীন ডিআইবিএস-এ (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ) পাশের হার ৭৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এবার এইচএসসিতে ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, মাদরাসা বোর্ডে ৯৪ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ঢাকা বোর্ডে ৮৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম পাসের হার যশোর বোর্ডে ৬০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এছাড়া সিলেট বোর্ডে ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ ও চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০ দশমিক ০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২১৪ জন ছাত্র এবং ৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৬ জন ছাত্রী। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ছাত্রদের ৭৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা এগিয়ে। ৩৮ হাজার ৭৮৭ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছাত্রীরা পেয়েছে ৩১ হাজার ৮১৫ জন। গত কয়েক বছরের মতো এবারও ঢাকা বোর্ডসহ সারাদেশের মধ্যে সেরা হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নরসিংদীর আব্দুল কাদের  মোল্লা সিটি কলেজ ও তৃতীয় হয়েছে রাজধানীর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৫৭ হাজার ৭৮৯ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৬ হাজার ২৫ জন ও কারিগরি বোর্ডে ৬৩৯৩ জন।
গত ৩ এপ্রিল দেশব্যাপী একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন। মোট ২৩৫২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ৮ জুন।
পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা পিছিয়ে যশোর:  সাধারণ ৮টি শিক্ষাবোর্ডে পাস ও জিপিএ-৫ শীর্ষে ঢাকা বোর্ড। এবার সর্বমোট ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮১৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৭৭২ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১ হাজার ২০৯ জন। যশোর শিক্ষা বোর্ডে মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৬৯ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। পাসের হার ৬০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২৩১ জন। 
বিদেশ কেন্দ্র: বিদেশে ৫ টি কেন্দ্রে মোট ২১১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১৫৩ জন পাস করেছে। পাসের হার ৭২ দশমিক ৫১। 
ফল পুনঃনিরীক্ষা: রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আগামী ১৪ থেকে ২০শে আগস্ট পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে বলে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মন্ত্রী। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি  মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দু’টি পত্রের জন্য  মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয়  কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
দেশকে আলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী
শিক্ষার মান নিয়ে সংশয়বাদীদের সমালোচনার জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এ কথা চিন্তা করলে কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে না। তিনি বলেন, সমালোচনা ছাড়া কেউ কোন ভাল কাজ করতে পারবে না এবং এজন্য আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলতে চাই যে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এ কথা পরিহার করে এগিয়ে যান। তিনি গতকাল সকালে গণভবনে চলতি বছরের এইচ এস সি ও সমমানের পরীক্ষার ফল গ্রহণকালে একথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও ১০ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফল তুলে দেন। শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মাদ সাদিক এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার ও প্রেস সচিব এ কে এম শামিম চৌধুরী। শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে ‘ভাল হোক মন্দ হোক’ সব কাজেই তারা পরশ্রীকাতর। তিনি বলেন, কে কি বললো এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌঁছে দেয়া। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অন্ধকার যুগ থেকে দেশকে আলোর দিকে নিচ্ছি এবং এই আলো হচ্ছে শিক্ষার আলো। কোন জাতিই শিক্ষা ছাড়া উন্নতি করতে পারে না। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই- এ লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে শিক্ষা। 
সব সূচককে ইতিবাচক বললেন শিক্ষামন্ত্রী: এবার ফলে সব সূচককে ইতিবাচক বললেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর দিকে থাকালে সব সূচক ইতিবাচক। তিনি বলেন, এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। জিপিএ-৫  বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ হাজার ৪০৫ জন। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অনুত্তীর্ণ হওয়ার সংখ্যা কমেছে। শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শতভাগ ফেলের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। 
বেড়েছে শতভাগ পাস, কমেছে শূন্য পাসের প্রতিষ্ঠান
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২৯৮টি। অপরদিকে গত বছরের তুলনায় শূন্য পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা একটি কমেছে। এবার ২৪ প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এক হাজার ১৪৭ প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে। গত বছর ২৫ প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি এবং ৮৪৯ প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছিল। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে গতবারের মতো এবারও শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানে এগিয়ে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। গতবারের চেয়েও বেড়েছে ১৮১টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাসের হার। এ বছর মাদরাসা বোর্ডের ৮৫৯টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাস করেছে। যা গতবছর ছিল ৬৭৮টি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ফলাফল প্রকাশ করেন। ১০  বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৮ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ২১টি শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকায় একটি ও রাজশাহী বোর্ডে দুটি। এছাড়া যশোর বোর্ডে ৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১, বরিশাল  বোর্ডে ২ ও দিনাজপুর বোর্ডে ৭ প্রতিষ্ঠানের সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। কুমিল্লা ও সিলেট বোর্ডে কোন শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়া মাদরাসা বোর্ডে তিনটি শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বোর্ড। এ বোর্ডে ৫১ প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ১৫, কুমিল্লা বোর্ডে ৮, যশোর বোর্ডে ৫, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৩, বরিশাল বোর্ডে ১, সিলেট বোর্ডে ১০ ও দিনাজপুর বোর্ডে ১৭টি শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাদরাসা বোর্ডে ৮৫৯ ও কারিগরি বোর্ডে ১৭৮ প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে।

No comments

Powered by Blogger.