ভারতে আলোচিত বিচারপতি নিয়োগ কমিশন বিল পাস

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আপত্তি উপেক্ষা করে নরেন্দ্র মোদি সরকার গতকাল বুধবার লোকসভায় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন বিল পাস করল। মূল বিলে সামান্য সংশোধন এনে কংগ্রেসসহ সব দলের সহায়তায় এটি পাস করানো হয়। বিলটি এবার রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। এ বিল আইনে পরিণত হলে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের ‘কলেজিয়াম’-এর হাতে থাকবে না। ছয় সদস্যের এক কমিশন তা পালন করবে। এ বিলের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করে আইনসভার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হলো। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর এম লোধা এ উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর মতে, প্রচলিত ব্যবস্থায় ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা তুলে অন্য ব্যবস্থা আনা ঠিক নয়। কলেজিয়াম ব্যবস্থা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ আরও চার জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কমিটিই বিচারপতি নিয়োগ করতেন। নতুন বিল অনুযায়ী, সেই দায়িত্বে থাকবেন মোট ছয়জন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, আরও দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী এবং দুজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ। দুই আইনজ্ঞকে বেছে নেবেন প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং লোকসভার বিরোধী নেতা অথবা প্রধান বিরোধী দলের নেতা। এই ছয়জন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ দেওয়ার পর সই করবেন রাষ্ট্রপতি। কোনো নাম নিয়ে রাষ্ট্রপতির আপত্তি থাকলে দ্বিতীয়বার তা বিবেচনা করা হবে।
মূল বিলে সে ক্ষেত্রে ‘মতৈক্যের’ কথা বলা হলেও বিরোধীদের আপত্তির মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়। মূল বিলে বিরোধের ক্ষেত্রে আইনমন্ত্রীর ‘ভেটো’দানের অধিকার থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাদ দেওয়া হয়। এ বিলের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও অধিকার খর্ব করা হলো কি না, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ অবশ্য দাবি করে আসছেন, বিচার বিভাগের অধিকার হরণ বা স্বাধীনতা খর্ব করার কোনো প্রশ্ন নেই। পাশাপাশি আইনমন্ত্রী গতকাল লোকসভায় বলেন, ‘সংসদের পবিত্রতা ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠাও গুরুত্বপূর্ণ।’ বিচার বিভাগীয় কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম সচেষ্ট হয়েছিল কংগ্রেস। এ-সংক্রান্ত বিল রাজ্যসভায় তারা পেশও করেছিল। তাই এ বিলের বিরোধিতা কংগ্রেস তেমনভাবে করতে পারেনি। অন্য বিরোধী দলগুলোও বিলকে সমর্থন জানায়। ডেপুটি স্পিকার এম থাম্বিদুরাই: কংগ্রেসকে বঞ্চিত করে তৃতীয় বৃহত্তম দল এআইএডিএমকের এম থাম্বিদুরাইকে লোকসভার ডেপুটি স্পিকার করা হয়েছে। গতকাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বসম্মতিক্রমে তিনি নির্বাচিত হন। তিনি এর আগেও ডেপুটি স্পিকার হয়েছিলেন। তাঁকে এ পদে বসানোর মধ্য দিয়ে বিজেপি-এআইএডিএমকে সমঝোতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হলো। এখন দেখার বিষয়, মোদি সরকার কংগ্রেসকে লোকসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা দেয় কি না।

No comments

Powered by Blogger.