সংগঠন নয়, ব্যক্তির বিচারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকায় সফররত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মার্কিন দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ জানিয়েছেন, কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যে কোন ব্যক্তির বিচারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। ওই বিচারের প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার তাগিদ দেন তিনি। সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ অভিমত দেন। মার্কিন দূত বলেন, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যে বিচার চলছে তার সঙ্গে রাজনৈতিক দলকে টানা ঠিক হবে না। এটি করা হলে শান্তি ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না। রাজধানীর বারিধারাস্থ আমেরিকান সেন্টারে মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে আছে, বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু ইউরোপসহ পৃথিবীর অনেক দেশই ওই বিধান তুলে দিয়েছে। তাই ওই দণ্ড দেয়ার ব্যাপারে অভিযুক্তের সঙ্গে অপরাধের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। যে কোন অপরাধে কারও সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আগে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার তাগিদ দেন তিনি। কাদের মোল্লার ফাঁসির বিষয়ে মার্কিন দূত বলেন, প্রথম আদালতে কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়া হয়নি। কিন্তু পরে আইন পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ওই আইনেই সর্বোচ্চ আদালত থেকে তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ জানিয়েছিল উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিচারিক আদালত যাবজ্জীবনের যে রায় দিয়েছিল দ্বিতীয় কোন আদালত থাকলে সেখানে এটি আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করা যেতো। বিচারিক আদালত আর উচ্চ আদালতের মধ্যে আরেকটি আদালত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। তবে চলমান ডিফেন্স টিম তৃতীয় কোন দেশে বিচারের যে দাবি তুলেছে তাকে আনরিয়েলিস্টিক বলে মত দেন মার্কিন ওই বিশেষ দূত। ঢাকায় তার এবারের সফরকে পঞ্চম সফর উল্লেখ করে স্টিফেন জে র‌্যাপ বলেন, এর আগে আমি যখন এসেছি, তখন চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচারকে আন্তর্জাতিক মানের করতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। অনেকটা বাস্তবায়ন হয়েছে। এটি ভাল। তবে ওই বিচারকে আন্তর্জাতিক মানের করতে এখনও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে এগোচ্ছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি প্রশ্নে সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি তিনি। তবে এবারও বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হয়েছে বলে জানান র‌্যাপ। গাজায় ইসরাইলি হামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে যুদ্ধাবস্থা রয়েছে, তাই যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারটি আসতে পারে। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আরও বিচার-বিবেচনা করতে হবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে জনগণের সমর্থন রয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন আছে। গত দু’টি সাধারণ নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নুরেমবার্গ বিচারের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি অভ্যন্তরীণ আদালত হলেও বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেছে। স্টিফেন জে র‌্যাপ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচারে সমর্থন দেয়ায় মার্কিন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ ক্ষেত্রে এ সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। র‌্যাপ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সহযোগিতা করতে তার আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। যাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি একটি মডেল হতে পারে। ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে এই জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.