ইরাকে অভিযানে ইরানি সেনা!

কিরকুক শহরের আশপাশের পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখছেন
ইরাকের কুর্দিদের পেশমের্গা বাহিনীর এক সদস্য। গতকাল উত্তর
ইরাকের এ শহরে প্রায় পরপর তিনটি গাড়িবোমার বিস্ফোরণ
ঘটেছে। এতে ২১ জন নিহত হয়। এএফপি
ইরাকের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে ইরানি সেনারা। ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের কাছ থেকে একটি শহর দখলমুক্ত করতে কুর্দি বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে এক অভিযানে অংশ নিয়েছে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীর বরাত দিয়ে আল-জাজিরা টেলিভিশন এ খবর দিয়েছে। তবে এ খবরের সত্যতা অস্বীকার করেছে ইরান। এদিকে ইরাকের পার্লামেন্টের দুটি সুন্নি জোট আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় সরকার গঠন নিয়ে সংকট আরও জটিল হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা আগের তুলনায় বেড়েছে। খবর আল-জাজিরা,
সিএনএন ও বিবিসির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কুর্দি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার কয়েক শ ইরানি সেনা সীমান্ত অতিক্রম করে ইরাকে ঢোকে। ওই দিনই দিয়ালা প্রদেশের জালাওয়ালা শহর পুনরুদ্ধারে তারা কুর্দি পেশমের্গা বাহিনীর সঙ্গে আইএসবিরোধী অভিযানে যোগ দেয়। পরদিন শনিবার তারা ইরানে ফিরে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রথম সুন্নি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নেমেছে ইরানি বাহিনী। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজিহ আফখাম ইরাকে তাঁর দেশের কোনো সেনার উপস্থিতির কথা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সংগতি রেখে তেহরান ইরাক পরিস্থিতির ওপর ‘ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে’। এদিকে শনিবার সরকার গঠনের আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সুন্নি বড় দুটি জোট। এটি প্রধানমন্ত্রী মনোনীত ইবাদির সরকার গঠন-প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলল। সুন্নি নেতা আল-জাবুরি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সুন্নি মসজিদে ভয়াবহ হামলার প্রতিবাদে তাঁরা সরকার গঠনের আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যারা সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে চায়, তারাই এই হামলার জন্য দায়ী। সরকার গঠনের জন্য ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন ইবাদি। তিনি ব্যর্থ হলে নতুন সংকটে পড়বে ইরাক। শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে ইবাদি নতুন সরকার গঠনের জন্য মন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান।
ইরাকে গত এপ্রিলে পার্লামেন্ট নির্বাচন হলেও এখনো নতুন সরকার গঠিত হয়নি। নানা নাটকীয়তার পর প্রেসিডেন্ট ফুয়াদ মাসুম নতুন সরকার গঠন করতে হায়দার আল-ইবাদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। শিয়া নেতা ইবাদি সরকার গঠন প্রশ্নে পার্লামেন্টের সুন্নি জোটগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকার গঠন নিয়ে এই জটিলতার প্রেক্ষাপটে ইরাকে বোমা হামলা বাড়ছে। শুক্রবার দিয়ালা প্রদেশে সুন্নি মসজিদে হামলায় অন্তত ৭৩ জন নিহত হন। গতকাল রোববার রাজধানী বাগদাদ ও উত্তরাঞ্চলীয় শহর কিরকুকে বোমা হামলায় নিহত হন আরও অন্তত ৪২ জন। এদিকে মার্কিন বিমান হামলার মাধ্যমে সহায়তা সত্ত্বেও ইরাকের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আইএসকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না ইরাকি বাহিনী ও কুর্দি যোদ্ধারা। কুর্দিদের রাজধানী ইরবিল ও কিরকুকের কাছের শহর আমেরলিতে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে আইএস জঙ্গিরা। তারা দুই মাস ধরে আমেরলি অবরোধ করে রেখেছে। এখানে শিয়া জনগোষ্ঠীর বাস। ইতিমধ্যে আমেরলির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিশ্বসংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা আমেরলি শহরে ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ডের’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্যের অভিযোগ: যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, আইএসের এক ব্রিটিশ জঙ্গি সদস্যের মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলিকে হত্যা করার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। সানডে টাইমস-এ লেখা এক নিবন্ধে হ্যামন্ড বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার ‘বর্বর এই মতবাদ’ মোকাবিলায় ‘গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’ বিনিয়োগ করেছে। আইএসের ওই জঙ্গিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ভিডিওতে শোনা ইংরেজি উচ্চারণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ওই জঙ্গি লন্ডন বা তাঁর আশপাশের অধিবাসী।

No comments

Powered by Blogger.