রাজপথ ছাড়বেন না ইমরান

ইমরান খান
রাজধানীতে অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রেখে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, অবস্থান তুলে নিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পিটিআইয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। তিনি আবারও ‘ভোট জালিয়াতির’ সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি চেয়েছেন। এদিকে চলমান রাজনৈতিক সংকট ‘দ্রুততার সঙ্গে’ সমাধানে একমত হয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির সেনাপ্রধান। খবর ডন ও এনডিটিভির। ২০১৩ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ১৩ দিন ধরে ইসলামাবাদের কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউসহ কয়েকটি সড়কে অবস্থান নিয়েছেন ইমরান খানের সমর্থকেরা। আধ্যাত্মিক নেতা তাহির-উল কাদরির পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিকের (পিএটি) সমর্থকেরাও একই দাবিতে রাজপথে রয়েছেন। তবে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট গত সোমবার এক পিটিশনের শুনানিকালে বলেন, কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউ থেকে সবাইকে সরে যেতে হবে। কারণ, সড়কটিতে অবস্থানের কারণে বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবার আদালতে যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে। আদালত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলেন। কিন্তু গতকাল বিকেলেও ওই সড়কটিতে আন্দোলনকারীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
তাঁদের সরিয়ে দিতে তখন পর্যন্ত পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ফলে বিচারকসহ অন্যরা আদালতে যাওয়ার জন্য গতকালও আগের দিনগুলোর মতো বিকল্প পথ ব্যবহার করেছেন। সরকার, পিটিআই ও পিএটির আইনজীবীরা গতকাল আদালতের নির্দেশের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন। সরকারের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ওই সড়ক থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অন্যদিকে পিটিআই বলেছে, তাদের কর্মীরা কোথাও গাড়ি আটকাচ্ছেন না। আর পিএটি বলেছে, বিক্ষোভ করা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, ‘তাঁরা (আদালত) কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউকে খালি করতে চান। আমরা ওই সড়কে নেই। সুতরাং আদালতের আদেশ আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই যেসব ব্যক্তি ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের শাস্তি হোক।’ সোমবারের পর নওয়াজ শরিফ সব ধরনের নৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন ইমরান। সোমবার পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ২০১৩ সালের নির্বাচনে কথিত ব্যাপক ভোট জালিয়াতির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। ইসিপির বৈঠক বাতিল: নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ নিয়ে কথা হচ্ছে, তার ওপর আজ বুধবার একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। সূত্র বলেছে, কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউতে চলমান অবস্থান ধর্মঘটের কারণে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা কার্যালয়ে যেতে পারছেন না। মূলত এ কারণেই ওই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। মিত্রের খোঁজে পিটিআই: ইমরানের পিটিআই এখন পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করছে।
এ বৈঠকের লক্ষ্য হচ্ছে, তাদের পরিবর্তন পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন আদায়। পিটিআই-শিবিরের বিশ্বাস, তারা নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) সরকারকে ক্ষমতায় বহাল থাকার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো পথ দেখিয়েছে। সেটা হচ্ছে, নওয়াজ এক মাসের জন্য পদত্যাগ করবেন। তবে পিএমএল-এনই ক্ষমতায় থাকবে। এই এক মাসে প্রস্তাবিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন ভোট জালিয়াতির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবে। নতুন এই ফর্মুলার পক্ষে সমর্থন পেতে পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা দেশটির প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এখন যোগাযোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী-সেনাপ্রধান বৈঠক: প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ গতকাল তাঁর কার্যালয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বৈঠকের কিছুক্ষণ পরই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে চলমান সমস্যা দ্রুততার সঙ্গে সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের ঘটনা নিয়েও আলোচনা করেছেন বলে বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.