ব্যর্থতার আগুনে সবাইকে পোড়াতে চাইছ বিএনপি by তানজির আহমেদ রাসেল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে আবারও দেশকে অশান্ত করতে চায়। কোন দল যদি নির্বাচন না করে আর মনে করে যে নির্বাচন ঠেকাবে- ঠেকাতেও যদি ব্যর্থ হয়, আন্দোলন করতেও যদি ব্যর্থ হয় সে দায় তো বাংলাদেশের জনগণের না। সে দায় তো আমাদের না। ব্যর্থতার আগুনে তারা সবাইকে পোড়াতে চাইছে। তারা তা পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর জন্য হরতাল, খুন, বাস ও ট্রেন পোড়ানো, মসজিদে আগুন দেয়া, গাছ কাটা, রাস্তা কাটাসহ বিএনপি-জামায়াত চক্র নানা অপকর্ম করেছে। জনগণ তাদের ডাকে সাড়া  না দিয়ে প্রমাণ করেছে রাজনীতির নামে সহিংসতা তারা চায় না। কারণ জনগণ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের ক্ষতচিহ্ন ভুলে যায়নি। হাওয়া ভবন খুলে দিয়ে দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, খুন, ধর্ষণ, চোখ উপড়ে ফেলাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা বিএনপি করেনি।
মঙ্গলবার সেন্ট্রাল লন্ডনের হোটেল হিল্টন অন পার্ক লেইনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতার মাহফিলের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী  এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে মে মাস থেকে  জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত  ৫শ’র বেশি স্কুল পুড়িয়েছে। তারা প্রিজাইডিং অফিসারকে খুন করেছে। তারপরও নির্বাচন হয়েছে, শতকরা ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন নির্বাচিত সরকার আরেক নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলো। যে দল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করে, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা এনেছে সে দল আবার ক্ষমতায় এলো। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে কাজগুলো হাতে নিয়েছিলাম সেগুলো করে যেতে পারব। এখনও আমাদের হাতে চার বছর পাঁচ মাস সময় আছে। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল, জ্বালাও পোড়াও সত্ত্বেও আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি আমরা ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটি টার্গেট রয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে আমরা দিয়েছিলাম ‘ভিশন-২০২১’, আর এবার নির্বাচনে আমরা দিয়েছি ‘ভিশন-২০৪১’। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও আমাদের জিডিপি ৬ শতাংশের বেশি। মাথাপিছু আয় ১১৯০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ ৬ বিলিয়ন থেকে  ২১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৫ই আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। আমি ও রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছি। আপনজন হারিয়ে, সেই ব্যথা বুকে নিয়ে দেশ পরিচালনার মতো এত বড় গুরু দায়িত্ব নেয়া খুবই কঠিন। শুধু আল্লাহ সহায় আছেন বলে আমি সে দায়িত্ব পালন  করতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে,   মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। আমার জীবনের একটাই  কামনা, বাংলাদেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র ও উন্নত জীবন পায়। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করার জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল, তার কন্যা হিসেবে তার সে স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায়।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারীর অধিকার ও নারী স্বাধীনতায়  অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে  অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। ৩,২০০ মেগাওয়াট থেকে ১১,৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। শুধু রমজান মাসে চাহিদামতো ৭,৪০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা বাড়লে আরও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে বলে জানান তিনি। যুবসমাজকে প্রশিক্ষিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে  হবে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং-এর মাধ্যমে যুব সমাজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু  করবো। ইনশাআল্লাহ আমরা তা করবো। বৃটিশ ভিসা কার্যক্রম দিল্লিতে স্থানান্তর প্রসঙ্গে বৃটিশ সরকারের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি কোন সমস্যা হবে না বলে তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র  বিজয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। বিপুল পরিমাণ এই সমুদ্র সম্পদ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন। এতে যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সভাপতি তামিম আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। পরে শেখ হাসিনা  পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল,  তার  সফরসঙ্গী ও  বৃটিশ এমপিদের নিয়ে ইফতার করেন।  আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও বেশ কয়েকজন বৃটিশ এমপি বক্তব্য রাখেন।
প্রবাসীদের সঙ্গে বৈঠক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষ করে সিলেটের প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকার দেশী ও বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দেশে একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী ও পররাষ্ট্র সচিব যৌথভাবে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলায় বিজয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ‘বৃটিশ কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

No comments

Powered by Blogger.