৪০ দেহাবশেষ নেদারল্যান্ডসে

মালয়েশিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ডাচ আরোহীদের দেহাবশেষ
নেদারল্যান্ডসে নেওয়ার উদ্দেশ্যে গতকাল ইউক্রেনের খারকিভ
বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে তোলা হয়। ছবি: এএফপি
প্রথম দফায় বিধ্বস্ত মালয়েশীয় উড়োজাহাজটির আরোহীদের ৪০ জনের মৃতদেহ গতকাল বুধবার নেদারল্যান্ডসে পৌঁছেছে। লাশবাহী দুটি সামরিক বিমান গতকাল স্থানীয় সময় বিকেলে ইউক্রেন থেকে আইন্ডহোভেন শহরে অবতরণ করে। ভাবগম্ভীর পরিবেশে সামরিক কায়দায় সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে ডাচ প্রধানমন্ত্রী ও রাজপরিবারের সদস্যরা মরদেহ গ্রহণ করেন। উড়োজাহাজটির নিহত ২৯৮ জন আরোহীর মধ্যে ১৯৩ জনই নেদারল্যান্ডসের।
এদিকে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির ব্ল্যাক বক্স দুটি তথ্য বিশ্লেষণের জন্য যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও সিএনএনের। আইন্ডহোভেন বিমানঘাঁটিতে সামরিক কায়দায় শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে ৪০টি কফিন গ্রহণ করা হয়। একজন সেনা বিউগলে তোলেন বিদায়ী ‘লাস্ট পোস্টের’ সকরুণ সুর। লাশবাহী একটি ডাচ ও একটি অস্ট্রেলীয় বিমান আইন্ডহোভেনে অবতরণের আগে নেদারল্যান্ডসের গির্জাগুলো পাঁচ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজায়। অনুষ্ঠানস্থলে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে গতকালও এক দিনের জাতীয় শোক দিবস পালন করে নেদারল্যান্ডস। মরদেহগুলো পরে হিলভারসাম শহরের এক সেনা ব্যারাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে। এতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। এর আগে গতকাল সকালে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের সরকারনিয়ন্ত্রিত খারকিভ শহরের বিমানবন্দরে লাশবাহী বিমান দুটিকে বিদায় জানান। মঙ্গলবার রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের এলাকা থেকে ২০০টি লাশ ট্রেনে করে খারকিভ শহরে পাঠিয়েছিল। তবে তারা কতগুলো লাশ পাঠিয়েছিল, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া যায়। ট্রেনে লাশের সঙ্গে থাকা মালয়েশীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, সেখানে ২৮২টি মৃতদেহ ও ৮৭টি দেহাংশ ছিল। কিন্তু ডাচ কর্মকর্তারা মাত্র ২০০টি লাশের কথা নিশ্চিত করেন।
অবশ্য একজন ডাচ কর্মকর্তা এ-ও জানান, ট্রেনের অন্যান্য কামরায় লাশ খোঁজা হচ্ছে এবং সবগুলো মৃতদেহ সেখানে থাকতে পারে। সোমবার কর্মকর্তারা বলেছিলেন, অন্তত ১৬টি লাশের খোঁজ মেলেনি। এগুলো হয়তো এখনো ধ্বংসাবশেষের স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ: মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয় বলেছে, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ইউক্রেনের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পৃক্ততা থাকার তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এ ধারণার জোরদার ভিত্তি আছে যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে এসএ-১১ (ক্ষেপণাস্ত্র) ছুড়ে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। তাঁরা বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা খুব সম্ভবত যুদ্ধবিমান মনে করে ভুলবশত এটি ভূপাতিত করেছে। এদিকে ইউক্রেনের তথ্যসংক্রান্ত নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ভিতালি নায়দা বলেছেন, যে ব্যক্তি উড়োজাহাজটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্রের বোতাম টিপেছেন, তিনি একজন ‘খাঁটি’ রুশ। তিনি ‘একজন রাশিয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, সুদক্ষ, সুশিক্ষিত কর্মকর্তা।’ নায়দা বলেন, ‘আমরা একজন রুশ কর্মকর্তা ও মস্কোয় তাঁর কার্যালয়ের মধ্যে এ নিয়ে কথোপকথন রেকর্ড করেছি। আমরা নিশ্চিত, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কয়েক মিনিট আগে একজন রুশ কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে বার্তা পাঠানো হয়।’ মস্কো তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছে। ইউক্রেনের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: রুশপন্থী বিদ্রোহীরা গতকাল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দেশটির দুটি সামরিক বিমান ভূপাতিত করেছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, পূর্বাঞ্চলীয় সাভুর মজিলা এলাকার কাছে ওই যুদ্ধবিমান দুটি ভূপাতিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.