ইইউ–ইউক্রেন ঐতিহাসিক চুক্তি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে অবশেষে সেই ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করল ইউক্রেন৷ মুক্ত বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক এই চুক্তি করা না-করা নিয়ে দ্বন্দ্বে এরই মধ্যে ওলটপালট হয়ে গেছে দেশটি৷ ডুবে গেছে গভীর সংকটে৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেন ইইউর সঙ্গে চুক্তি করার পর রাশিয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এই চুক্তির ‘পরিণতি হবে মারাত্মক’৷ খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অপর দুই দেশ জর্জিয়া এবং মলডোভাও ইইউর সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করেছে৷ এর ফলে ইউরোপের এই তিন দেশের বাসিন্দাদের জন্য ইইউর নিবিড় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঞ্চলে প্রবেশের পথ প্রশস্ত হবে৷ একপর্যায়ে দেশগুলো ইইউর সদস্য পদ পাবে৷ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গতকাল শুক্রবার চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো বলেন, ‘ইউক্রেন তার ইউরোপীয় স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গত কয়েক মাসে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছে৷’ তিনি এই চুক্তিকে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ অন্যদিকে, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হারম্যান ভান রমপুয়ে শুক্রবারের দিনটিকে বর্ণনা করেছেন ‘ইউরোপের জন্য মহান দিবস’ হিসেবে৷ ইউক্রেন, জর্জিয়া ও মলডোভার নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইইউ আজ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে৷’ রাশিয়ার ক্ষতি হতে পারে, এমন কিছুই ওই চুক্তিতে নেই বলেও দাবি করেন হারম্যান৷ তবে চুক্তির ঘটনায় যারপরনাই খেপেছে মস্কো৷ কেননা, সাবেক এই সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে জোট করে ইইউ ও ন্যাটোকে মোকাবিলা করার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের স্বপ্নের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল৷ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরপরই রাশিয়ার পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে৷
চুক্তির নিন্দা জানিয়ে দেশটির ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রিগোরি কারাসিন গতকাল বলেন, ইউক্রেনের জন্য এই চুক্তি ‘মারাত্মক পরিণতি’ বয়ে আনবে৷ আর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইইউর সঙ্গে ইউক্রেন, জর্জিয়া ও মলডোভার ওই চুক্তির ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হলে মস্কো ব্যবস্থা নেবে৷ ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ রাশিয়ার চাপে গত বছরের নভেম্বর মাসে ইইউর সঙ্গে এই চুক্তি সই করা থেকে শেষ মুহূর্তে পিছু হটলে দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ কয়েক মাস ধরে আন্দোলনের মুখে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন৷ এরপর রাশিয়া ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষী স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ করে নিলে ইউক্রেন সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে৷ ওই ঘটনার পর রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়৷ পরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশ ভাষাভাষী অন্য এলাকাগুলোতেও রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়৷ সেখানে মধ্য-এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সহিংসতায় অন্তত ৪২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে৷ সরকার গত সপ্তাহে ওই এলাকায় একতরফা অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়, যার মেয়াদ গতকাল শেষ হয়৷ অবশ্য অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছিল৷

No comments

Powered by Blogger.