ইরাকের অখণ্ডতা রক্ষায় দরকার ফেডারেল সরকার

সুন্নি জঙ্গিদের একের পর এক শহর দখল আর ক্রমাগত আক্রমণের কারণে ইরাকে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার অবসানের ইঙ্গিত পাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা৷ তাঁদের পরামর্শ, দেশটির অখণ্ডতা রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় (ফেডারেল) সরকারপদ্ধতি অবলম্বন করাই হবে এখন সবচেয়ে ভালো উপায়৷ জঙ্গিদের সশস্ত্র উত্থানে ইরাকে জাতিগত ও সাম্প্রদািয়ক বিভক্তি চরম রূপ নিয়েছে৷ ১৯২০ সালে আধুনিক ইরাক রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়৷ এর পর থেকে প্রায় সব সময়ই দেশটিকে জাতিগত ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত মোকাবিলা করতে হয়েছে৷ দেশটির জনসংখ্যার অধিকাংশই আরব বংশোদ্ভূত শিয়া মুসলমান৷ কিন্তু ১৯৩২ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সুন্নি আরব সংখ্যালঘুরাই ইরাকের শাসনক্ষমতায় ছিল৷ স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন ওই বছর মার্কিন অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়৷ ইরাকে সংখ্যালঘু কুর্দি জনসংখ্যাও কম নয়৷ তাদের আবাস মূলত ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত এলাকাজুড়ে৷ নিজেদের একটি রাষ্ট্রের জন্য তাদের লড়াই শতবর্ষের৷ বর্তমান সংকটের সুযোগ নিয়ে তারা তেলসমৃদ্ধ কিরকুক এলাকাটি দখল করে নিয়েছে৷ এদিকে শিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা সুন্নি জঙ্গিদের প্রতিরোধে সশস্ত্র যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন৷ এতে দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের গবেষক ফানার হাদ্দাদ বলেন, ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল শহরটি জঙ্গিদের দখল সার্বিক পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে৷ অন্তত কুর্দি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এ কথাই বলতে হয়৷
কিরকুকের যে সমস্যাকে ইরাকের সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হতো, সেটি রাতারাতি সমাধান হয়ে গেল৷ কুর্দিরা এ জন্য জঙ্গিদের নিশ্চয়ই ধন্যবাদ দেবে৷ ইরাকে ১৯৯১ সাল থেকে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ছিল৷ তেলসম্পদের কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরেই কিরকুক এলাকাটি নিজেদের দখলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল৷ এখন কুর্দিদের প্রধানমন্ত্রী নেচিরভান বারাজানি বলছেন, গত সপ্তাহের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া এখন ‘প্রায় অসম্ভব’৷ সুন্নি সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর স্বায়ত্তশাসনই হতে পারে সবচেয়ে ভালো সমাধান৷ হাদ্দাদ মনে করেন, আরব অধ্যুষিত ইরাকে যেকোনো ধরনের বিভক্তি বিতর্ক তৈরি করবে৷ সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধ নিয়ন্ত্রণই হতে পারে ভালো সমাধান৷ কিন্তু সম্প্রতিক ঘটনাবলির আগে আরব অধ্যুষিত ইরাকে এ রকম বিভক্তির জোরালো সম্ভাবনা আর কখনো দেখা যায়নি৷ কিন্তু সুন্নি জঙ্গিদের লক্ষ্য ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা৷ যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা বিশ্লেষক জন ড্রেইক বলেন, ইরাক ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে৷ দেশটিতে ভৌগোলিক বা শাসনতান্ত্রিক বিভক্তি অসম্ভব নয়৷ প্রাচ্যবিষয়ক ফরাসি গবেষক অার্তুর কেসনে বিশ্বাস করেন, ইরাক ঐক্যবদ্ধই থাকবে৷ তবে সে জন্য অবশ্যই ফেডারেল বা কনফেডারেল সরকারব্যবস্থায় যেতে হবে৷ আর সংবিধানে সেই সুযোগও রাখা হয়েছে৷ সুন্নি নেতাদের অনেকেই জাতীয়তাবাদী এবং তাঁরা ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ ভাগাভাগি চান৷ নিজ নিজ অঞ্চলে তাঁরাও স্বায়ত্তশাসন চান৷

No comments

Powered by Blogger.