ক্রেস্টের সোনা জালিয়াতি

মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা-সমর্থনের জন্য বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া সম্মাননা ক্রেস্টের সোনা জালিয়াতির নজিরবিহীন ঘটনাটির দৃষ্টান্তমূলক আইনি প্রতিকার প্রয়োজন। কারণ, এর সঙ্গে গোটা জাতির মান-মর্যাদা জড়িত। কিন্তু এর তদন্ত–প্রক্রিয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ কিন্তু মনে রাখা দরকার, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে জাতির কলঙ্ক ঘুচবে না। ঘটনাটি তদন্তের ভার নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি৷ তারা একটি উপকমিটি গঠন করেছে৷ সেই উপকমিটি তদন্তের সময় দেড় মাস বাড়ানোর আবেদন কেন করেছে, আর সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কেনই-বা তা অনুমোদন করেছে, তা বোধগম্য নয়। কারণ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বিশদ তদন্ত হয়েছে এবং ক্রেস্টের সোনা-রুপা, কাঠ ইত্যাদিতে জালিয়াতির মাত্রাসহ এ ঘটনায় কার কতটা দায়, তাও মোটামুটি পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে৷ তার পরও এ ঘটনা নিয়ে অনেক পানি ঘোলা করা হয়েছে৷ এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, যাতে মনে হতে পারে, এ গুরুতর জাতীয় লজ্জার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলেও যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে না। তাহলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে? যঁাদের হাতে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব, তঁারা তো উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। দ্বিতীয়ত, এ ক্রেস্টের সোনা জালিয়াতির ঘটনার প্রধান দায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলামের৷ তিনিই আবার এ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, যে কমিটি এ ঘটনা তদন্তের ভার নিয়েছে৷
ফলে সংসদীয় কমিটি নিরপেক্ষভাবে ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ প্রতিকারের পথ প্রশস্ত করতে সক্ষম হবে—এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। উপরন্তু বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সংসদীয় কমিটিকে না জানিয়ে মন্ত্রণালয় মামলা করায়। এখন মামলার বিবাদী ক্রেস্ট সরবরাহকারী দুই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তারা সংসদীয় কমিটির তলবকেও অগ্রাহ্য করে বলছেন, তঁারা কমিটির সামনে হাজির হবেন না; যা বলার আদালতে গিয়ে বলবেন। কিন্তু মামলা হয়েছে বলেই তঁারা সংসদীয় কমিটির তলব অগ্রাহ্য করতে পারেন? এ স্পর্ধা তঁারা কোথায় পেয়েছেন? তা ছাড়া মন্ত্রণালয় কেন সংসদীয় কমিটির তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তঁাদের না জানিয়ে মামলা করতে গেল, সেটাও একটা যুক্তিসংগত প্রশ্ন। সংসদীয় কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ এতে অসন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি বলেছেন, ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মন্ত্রণালয় চটজলদি মামলা ঠুকে দিয়েছে। তা যদি সত্য হয়, তবে এর নিন্দা জানানোর ভাষা খঁুজে পাওয়া কঠিন। আর মন্ত্রণালয় মামলা করেছে ক্রেস্ট সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে; সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সাবেক ও বর্তমান সচিবসহ ১৩ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নয়। অর্থাৎ পুরো ঘটনাটির ব্যাপারে আইন প্রয়োগের প্রক্রিয়া যে বস্তুত শুরুই হয়নি, তা বেশ স্পষ্ট। এ টালবাহানা গ্রহণযোগ্য নয়। জাতি ক্রেস্টের সোনা জালিয়াতির নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক অপরাধের হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.