মালিকির বিদায় চায় যুক্তরাষ্ট্র

ইরাকে সুন্নি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিকে সরে যেতে হবে৷ যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি ইতিমধ্যে ইরাকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছে৷ এদিকে ইরাক সংকট মোকাবিলায় মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ তিনি গত বুধবার কংগ্রেসের নেতাদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন৷ রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয় সিনেটর মিচ ম্যাককনেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ খবর রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি ও দি ইন্ডিপেনডেন্টের৷ সুন্নি সম্প্রদায় মনে করে, ইরাকে বর্তমান সংকটের জন্য নুরি আল মালিকির নিপীড়নমূলক ও বৈষম্যমূলক শাসনই দায়ী৷ যুক্তরাষ্ট্রও মনে করে, মালিকি ক্ষমতায় থাকলে ইরাকে শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়৷ কেউ কেউ এমনও বলছেন, মালিকির এখনই বিদায় নেওয়া উচিত৷ ইরাকে কয়েক দিন ধরে গুটি কয়েক জঙ্গির হামলা এবং একের পর এক শহর দখলের পরও মালিকি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন৷ তাঁর সরকারের তিন লাখ ৫০ হাজার প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী তাঁদের কিছুই করতে পারছে না৷ এমনকি পরিস্থিতির কোনো ব্যাখ্যা দেননি মালিকি৷ ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র মালিকিকে ইরাকের ক্ষমতায় বসায়৷ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তাঁর ওপর প্রতিবেশী ইরানের প্রভাব সবচেয়ে বেিশ৷ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টি স্বস্তিকর নয়৷
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল কংগ্রেসে বলেছেন, ইরাকের বর্তমান সরকার দেশটির শিয়া, সুন্নি ও কুর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার কখনোই পূরণ করেনি বা করার চেষ্টা করেনি৷ সুন্নি জঙ্গিদের দমনে মালিকি সরকার বিমান হামলা চালাতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে৷ তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরাকে মার্কিন বিমান হামলা আসন্ন না হলেও সে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি প্রেসিডেন্ট ওবামা৷ তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরাকি ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালানোর জন্য এখনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনি৷ ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্টের (আইএসআইএল) জিহাদি জঙ্গিরা মসুলসহ ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহর ইতিমধ্যে দখল করে নিয়েছে৷ বছরের শুরুতে তারা ফালুজা দখল করেছে৷ এখন তারা রাজধানী বাগদাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ওপর৷ ‘সন্ত্রাসীদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে’ কী কী ‘বাড়তি পদক্ষেপ’ নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির সঙ্গে বুধবার আলোচনা করেছেন৷ এ ছাড়া ইরাকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বানও জানিয়েছেন বাইডেন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরাকের ব্যাপারে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে ওবামার সামনে এখন বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে৷ কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়া যাবে না বলেই তিনি গত বছর সিরিয়ায় সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন৷ তবে ইরাক সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ওবামা একক সিদ্ধান্তেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন৷
২০০৩ সালে ইরাকের মসুল শহরে মার্কিন অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস৷ তিনি বলেছেন, ইরাকে আবার মার্কিন সেনা পাঠানো উচিত হবে না; এমনকি বিমান হামলাও নয়৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান পেট্রাউস বলেন, ইরাককে যদি সাহায্য করতেই হয়, তাহলে সেটা হতে হবে দেশটির জনগণের সরকারের প্রতি৷ এখন বিমান হামলা চালিয়ে সহায়তার অনুরোধে রাজি হলে মার্কিনরা ইরাকের ‘শিয়া মিলিশিয়া বিমানবাহিনী’ হিসেবে পরিচিত হবে৷ বাগদাদের ২০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাইজি এলাকায় ইরাকের বৃহত্তম তেল শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারও সরকারি বাহিনী ও সুন্নি জঙ্গিদের মধ্যে লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে৷ সেখানকার অনেক কর্মীকে আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ গতকাল আরও ২৫০-৩০০ জন কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়৷ ওই শোধনাগারে এক দিন আগে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা জাতীয় তেল সরবরাহের বিষয়টিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ আল-আরাবিয়া টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, বাইজির ওই তেল শোধনাগার থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে৷ একটি ভবনে উড়ছে আইএসআইএলের একটি কালো পতাকা৷ সুন্নি জঙ্গিরা শোধনাগারের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তবে নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করছে, তারা তেল শোধনাগার জঙ্গিমুক্ত করার কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছেন৷ গতকাল শোধনাগার থেকে বের হয়ে আসা একজন শ্রমিক টেলিফোনে বার্তা সংস্থাকে বলেন, বুধবার রাতভর সামরিক হেলিকপ্টার থেকে জঙ্গিদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়৷

No comments

Powered by Blogger.