সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুলসহ সাত খুনের প্রতিবাদ সভায় এমপি শামীম ওসমান সুফিয়ান-হোসেন গুন্ড পানডাদের শায়েস্তা করতে আমি যথেষ্ট

সেভেন মার্ডারের প্রতিবাদে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে এক প্রতিবাদ সভায় শামীম ওসমান বলেন, “আমি মাঠে নামতে পারি। তবে আমি মাঠে নামব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার সব। আমি প্রধানমন্ত্রীকে সব জানিয়েছি। তিনি সব হারিয়েছেন। তিনি নজরুলের স্ত্রী-সন্তানসহ অন্যদের মতো সব হারানোর কথা বোঝেন। ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা ভালো না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই ঘটনার পেছনে-আগে-পরে যারা আছে, তাদের খোঁজে বের করা হবে। কেউ পার পাবে না।” আবু সুফিয়ান নামের একজনকে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি করপোরেশনের ৩০ কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন অভিযোগ করে তাকে মেয়রের সবচেয়ে ভালো বন্ধু বলে দাবি করেন শামীম ওসমান। প্রথম আলোতে প্রকাশিত আইভীর একটি সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, “সেখানে তিনি নিজের ভাইদের নাম আগে না বলে তার কর্মী আবু সুফিয়ানের নাম বলেছেন। এ থেকে বোঝা যায় সুফিয়ানের সঙ্গে তার কী মহব্বত!” একটি সিডির কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ওই সিডিতে আবু সুফিয়ান, হোসেন আর সেলিমের আলাপচারিতা থেকে বোঝা যায় নজরুলসহ সাত খুনের সঙ্গে তারা জড়িত। প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ হত্যা মামলার প্রতিবাদ ও খুনি নুর হোসেনের ফাঁসিতে অনুষ্ঠিত এ সভায় তিনি দাবি করেন, “সিডিতে সুফিয়ান বলে, মানুষ মারলে কী হয়। ফকির মারলেও ৩০২, শেখ হাসিনারে মারলেও ৩০২।” তিনি আরো বলেন, “সিডি শুনলে মনে হয় হোসেন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তা প্রমাণিত। ইকবালও এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের এই সাংসদ হুঁশিয়ারি করে বলেন বলেন, “আমি শামীম ওসমান। সুফিয়ান-হোসেন, গু-াপা-াদের শায়েস্তা করার জন্য আমি একলাই যথেষ্ট।” ইয়াসিন, আনোয়ারসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, তারা যদি মনে করে তারা সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় জড়িত নয়, তাহলে তারা যেন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তবে তিনি বলেন, “মামলায় যাদের নাম আছে, নারায়ণঞ্জবাসী মনে করে, আমি মনে করি, তারা সবাই জড়িত।” তিনি অবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানান। আসামী ইকবাল বিএনপি করে। সে নির্বাচনের আগে র‌্যাব-১০কে ১ কোটি টাকা দিয়ে নজরুলকে ধরে নিয়ে গেছে। পরে আমাকে ফোন দিলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে তাকে ছাড়িয়ে আনি।

রোববার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

শামীম ওসমান দাবি করেন, তিনি প্রশাসনের সব জায়গায় যোগাযোগ করেও অপহৃত নজরুলসহ জানবিক্ষা চেয়ে বাঁচাতে পারেননি। তিনি বলেন, “নজরুলের অপহরণের পর যখন র‌্যাবের কর্মকর্তাদের খবরটি জানিয়ে তাদের উদ্ধারের আবেদন জানাই, তখন তারা হাসাহাসি করেন। পরে র‌্যাবের সিওকে জানালে তিনি তাদের উদ্ধারের আশ্বাস দেন। নজরুলসহ সাতজনের অপহরণের পর তাদের মুক্তির জন্য যা যা করার সব করেছেন দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, “আমি চেয়েছি অন্তত লোকগুলো বেঁচে থাকুক। আমি ভিক্ষা চেয়েও পাইনি। আমি ক্লান্ত।

শামীম ওসমান বলেন, নজরুল-মাকসুদ-পারভেজ তার কর্মী ছিলেন। একে একে তার কর্মীদের খুন ও তার বিরুদ্ধে নানা সমালোচনার কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, “আমি অসহায় বোধ করছি। আমি আসলেই অসহায় বোধ করছি। তবে আমি আমার জন্য চিন্তা করি না। আমি আমার জন্য চিন্তা করি না। হায়াতের মালিক আল্লাহ। নারায়ণগঞ্জকে এভাবে চলতে দিতে পারি না। এর শেষ দেখতে চাই। আমি মাঠে নামব। আল্লাহকে হাজির-নাজির করে আপনারা ওয়াদা করেন, আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন। আমি শামীম ওসমান। শামীম ওসমান কাউরে কেয়ার করে না। নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শশুড় সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ শহীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় শামীম ওসমান বলেন, “এই লড়াইয়ে হুমকি আসতে পারে। আমার কোনো টাকা-পয়সা নেই। আমাদের এই লড়াইয়ে আর্থিক বিষয় নিয়ে লোক বিভেদ তৈরি করতে পারে। আমার আছে মায়ের দোয়া। আপনারা হচ্ছেন আমার সাহস। আর আমার শক্তি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরাধীদের শাস্তির দায়দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। তিনি জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আইন হাতে তুলে নেবেন না।”
এ প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা, আওয়ামীলীগ নেতা আনিছুর রহমান দিপু ভূইয়া ও নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।

No comments

Powered by Blogger.