জীবন গৌণ, ক্ষমতা আর লালসাই মুখ্য

যার লজ্জা-শরমের বালাই নেই মোটেও, সে ন্যাংটা হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে নির্দ্বিধায়। আর তাকে ন্যাংটা বা উলঙ্গ বলে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করে লাভ হবে না। কারণ, সে তো বলবে আমি ন্যাংটা থাকব না কাপড় পরে থাকব, সেটা আমার ইচ্ছা—তাতে তোমার কী? যে ন্যাংটা হয়ে পথে নেমেছে, তাকে তো আর উলঙ্গ বলে লজ্জা দেওয়া যাবে না। কিন্তু এখন অকাতরে মানুষ মরছে। পেট্রলবোমায়ও মানুষ মরেছিল। নিরীহ মানুষ, বাসের চালক, ঘুমন্ত হেলপার, বাসযাত্রী, চাকরিজীবী নিরীহ নারী-পুরুষ। তাতে ক্ষমতাসীন দলের লাভ হয়েছিল প্রচুর। রাজনৈতিক ফায়দা উঠিয়েছিল পুরোটাই। পেট্রলবোমা মারা আর তাতে জানমালের ক্ষতি করার অভিযোগে মামলার আসামি করেনি এমন বিরোধীদলীয় নেতা বাকি রাখেনি বলতে গেলে একজনও। আর যাঁর নামে মামলা হয়নি, তাঁকে বুঝতে হবে যে তিনি এখনো নেতার কাতারে উন্নীত হননি বা হতে পারেননি। সারা দেশের আইনজীবীদের ভোটে নির্বাচিত সর্বোচ্চ নেতা অর্থাৎ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন থেকে শুরু করে শারীরিকভাবে প্রায় প্রতিবন্ধী এবং সর্বক্ষণ বিএনপি অফিসে থাকা রুহুল কবির রিজভীসহ বাদ পড়েননি কেউই। পেট্রলবোমায় নিহত, রেললাইন উপড়ানো, বিভিন্ন জায়গায় আগুন, শত শত গাছ কাটা—অপরাধ হয়েছিল অজস্র আর নির্মম, বীভৎস। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অনেকেই। নেতারা প্রায় সবাই এখন জামিনে মুক্ত। সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল। কিন্তু বিচার? পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্য কম হয়নি। প্রতিটি অপরাধ, ঘটনার পর শত শত এমনকি হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ, অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে এবং অতি উৎসাহে।
পরে র‌্যাব গুলি করে কিছু মানুষকে মেরেছে বিভিন্ন স্থানে পেট্রলবোমা মারা ও অন্যান্য ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে। পেট্রলের আগুনে পুড়ে যারা মারা গেছেন বা অগ্নিদগ্ধ হয়ে পঙ্গু হয়ে এখনো কাতরাচ্ছেন—তাঁদের একজনও কি বিচার পেয়েছেন? আদৌ কোনো দিন কি বিচার পাবেন? কমবেশি অনেক ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। সরকার কি বলতে পারবে যে অন্তত একটা পেট্রলবোমায় হত্যার বিচার শুরু হয়েছে? নাশকতার একটা ঘটনার সুনির্দিষ্ট আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে? ধারণা অনুমান করছি, কোনো মামলা শুরু হয়নি। অনুমানের কারণ স্পষ্ট, পেট্রলে মানুষ মারার কারণে সরকারের যা পাওয়ার সরকার তা কড়ায়গন্ডায় আদায় করে নিয়েছে, অর্থাৎ বিরোধীদের জেলে পুরে তাঁদের আন্দোলন দমনের সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করেছে, আর সেই সুযোগে পুলিশও তার ‘প্রাপ্য’টা আদায় করে নিয়েছে পুরোপুরি। অর্থাৎ গ্রেপ্তার-বাণিজ্য, হাজার হাজার লোককে আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। পরে অনেকে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা একেবারে নিঃস্ব, তাঁরাই সম্ভবত এখন জেলে আছেন। নিরীহ যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের কেউ কেউ হয়তো বা এখনো থানায় ধরনা দিচ্ছেন বিচারের আশায়। ঘটনাপ্রবাহ যতই প্রতিকূল হোক না কেন, মানুষ বিচারের আশা ছাড়তে পারে না। বিচারের আশা ছেড়ে দিলে বাঁচার আশা কীভাবে আর থাকে। সব অন্যায়ের বিচার যে হবে, সেটা কোনো সমাজই শতভাগ নিশ্চিত করতে পারে না। কিন্তু বিচারের আশা যেখানে বিলীন হয়ে যায়, সমাজ সেখানে টেকে না। চার-ছয় মাস আগে পেট্রলবোমায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের নিকটজনের কতজন এখনো বিচারের আশা জাগিয়ে রাখতে পেরেছেন, সেটাও তো আমরা আর জানি না, খোঁজ রাখি না।
২. অপহরণ হচ্ছে, গুম হচ্ছে, চারদিকে লাশ ভেসে উঠছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন এটাও বিরোধীদের নতুন রাজনৈতিক কৌশল। ঠিক একই ভাষায় না

No comments

Powered by Blogger.