বিস্ময়-বালিকা by মো. সাইফুল্লাহ

সারিনা হোসেনের বয়স ১০ বছর। ছোট্ট মেয়েটার একটা বই বের হয়েছে লন্ডনের অলিম্পিয়া পাবলিশার্স থেকে। তার লেখা গল্পের অংশবিশেষের অনুবাদ প্রকাশিত হলো তোমাদের জন্য।
সারিনা হোসেন লেখালেখি করে একদম ছোট্টবেলা থেকে। পাঁচ বছর বয়সে যখন লিখে ফেলল, ‘দ্য গার্ল হু ওয়ান্টেড টু গো সি জি এস স্কুল’, দেখে তো তার মা-বাবার আক্কেলগুড়ুম! বাবা সাইফুল হোসেন বলছিলেন, ‘ও এমন সব শব্দ লেখে, মাঝেমধ্যে আমিও বুঝি না। স্কুলের শিক্ষকরাও দেখে অবাক!’ গুলশানের চিটাগং গ্রামার স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে সে। নিজের ডায়রিতে হিজিবিজি সব লেখা, সঙ্গে কী সব আঁকিবুঁকি করে। একটা লেজছাড়া বিড়াল, গোল গোল চোখের ভাঁড়, ভয়ংকর ডাইনি—আজব সব ছবি তার ডায়রিতে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী, তাই বাংলায় খুব ভালো লিখতে পারে না। আমরা অবশ্য তার লেখার খাতায় একটা বাংলা ছড়া ‘আবিষ্কার’ করেছি। যেই পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়তে গেছি, ‘না না! এটা পোড়ো না! এই ছড়াটা একদম পচা’ বলে লাফিয়ে উঠেছিল খুদে লেখিকা। একরকম জোর-জবরদস্তি করেই আমরা ছড়াটাতে চোখ বুলিয়ে নিয়েছি। সত্যি বলতে কি, সারিনার ‘পচা’ ছড়াটাও আমাদের মুগ্ধ করেছে!
সারিনা যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে, তখনই ঘটেছিল মজার ঘটনা। ‘ক্যাসেল অব ডুম’ নামে একটা গল্প লিখেছিল সে। সারিনার বাবা গল্পটা ই-মেইল করেছিলেন লন্ডনের অলিম্পিয়া পাবলিশার্সের কাছে। গল্প পড়ে প্রথমে তাদের বিশ্বাসই হয়নি, একটা ছোট মেয়ে এমন গল্প লিখতে পারে। প্রায় দুই বছর ধরে চলেছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অলিম্পিয়ার সম্পাদক দল দফায় দফায় যোগাযোগ করেছে সারিনার সঙ্গে। চুক্তিপত্রে সইটই করে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছর বাংলাদেশের ছোট্ট মেয়েটার বই বেরিয়েছে লন্ডনের প্রকাশনা সংস্থা থেকে। শুধু তা-ই নয়, সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই ক্যাসেল অব ডুম-এর সিক্যুয়েল বের হবে একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে। সারিনার ইচ্ছা, ক্যাসেল অব ডুম-এর ১০টি সিক্যুয়েল লিখবে। ভুতুড়ে দুর্গের গল্পে এরপর আর কী কী ঘটতে পারে, তা-ও সে ইতিমধ্যেই ভেবে রেখেছে!

তারপর?
সারিনা হোসেন বাংলায় তেমন একটা লেখালেখি করে না বলে আমরা অবশ্য ওর সঙ্গে একটু অভিমান করেছিলাম। শুনে সে আমাদের মান ভাঙাল। বলল, বাংলায় লেখালেখিটাও চর্চা করছে সে। স্কুলের বাংলা পরীক্ষায় ৯৯ পেয়েছে! তার প্রিয় লেখকের তালিকায় শুধু রোয়াল্ড ডাল নন, আছেন সুকুমার রায়ও।
কত-কী যে কল্পনা করে মেয়েটা, শুনলে অবাক হয়ে যাবে। তা সারিনা হোসেন যখন বড় হয়ে যাবে, সেই মানুষটাকে নিয়ে তার কী কল্পনা? প্রশ্ন শুনে সে গাঁইগুঁই করে। বলতে চায় না। আমরা ভাবি, সারিনা বোধ হয় ইয়া মোটা গোঁফওয়ালা দারোগা হতে চায়! কিংবা স্কুলের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আইসক্রিম বিক্রেতা! কিন্তু সেসব না। মিনমিন করে সারিনা বলে, ‘স্বপ্ন দেখি, আমি নোবেল প্রাইজ পেয়েছি!’

ছড়ার ছড়াছড়ি
‘দ্য ব্যানানাস হার্ট অ্যাটাক’ শিরোনামে সারিনা ছড়াটা লিখেছিল ইংরেজিতে। আমরা সেটা বাংলায় অনুবাদ করেছি। দেখ তো কেমন হলো?

কলার ‘হার্ট অ্যাটাক’
নাশতা খেতে গিয়ে দেখি টেবিলে এক কলা
অবাক করে করল শুরু হঠাৎ কথা বলা!
বলল, ‘আমায় খেয়ো না প্লিজ’, শুনে আমি থ!
সকাল সকাল ঘটছে এ কী—হ য ব র ল!
বলল কলা, ‘আমি বাপু হার্ট অ্যাটাকে ভোগা
কেমন করে খাবে আমায়, আমি যে খুব রোগা।’
ভেবে দেখি, তাই তো; তবে উপায় একটা আছে
কলাখানা নিয়ে গেলাম চিকিৎসকের কাছে।
দিলেন ওষুধ তিনি, একটা ইনজেকশনও ঠেসে
সুস্থ হয়ে কলাটা বেশ উঠল খানিক হেসে।
হঠাৎ শুনি ‘গাপুসগুপুস’, এ কী কাণ্ড হায়!
নাশতার সেই কলাটাকে ডাক্তার বাবু খায়!
আয়েশ করে খেলেন তিনি, আনন্দেতে দুলে
‘বাহ, এ ভারি মজার কলা!’ বলেন ঢেঁকুর তুলে।

দেখলে তো, এমন মজার সব ছড়ার ‘আইডিয়া’ গিজগিজ করে তার মাথায়! তুমি যদি জিজ্ঞেস করো, ‘এক দিনে তুমি কয়টা ছড়া লিখতে পারবে?’ সারিনা বলবে, ‘উম্ম্...১০০টা!’

No comments

Powered by Blogger.