অবরুদ্ধ ধানমন্ডি মাঠ

উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে যাঁরা ধানমন্ডি মাঠে স্থাপনা নির্মাণ করছিলেন তাঁদের কিছু হয়নি, বরং যাঁরা আদালতের আদেশের অনুকূলে থেকে সেই মাঠে প্রবেশ করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশে মাঠ, অরণ্য, নদী রক্ষার সংগ্রাম এখন আর নিছক ‘পরিবেশবাদ’ নয়, তা এখন নিঃশ্বাস নেওয়ার সংগ্রামে পর্যবসিত হয়েছে। ভূমিখেকোদের বহুরূপ, তার এক রূপ হলো খেলার মাঠকে ক্লাবের সম্পত্তি বানিয়ে তা আত্মসাৎ করা। ঢাকার ধানমন্ডির শেখ জামাল ক্লাব মাঠের বেলায় সেটাই ঘটেছে। ধানমন্ডি মাঠ নামে পরিচিত সবুজ ভূমিটি একসময় উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে ধানমন্ডি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড করার পরপরই মাঠটি ঘিরে ফেলা হয়। বন্ধ হয়ে যায় সর্বসাধারণের বিচরণ ও খেলাধুলা। সময়ে সময়ে এখানে কিছু টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়, চলে নানা রকম মেলা। এভাবে সর্বজনের ভূমি পরিণত হয় গোষ্ঠীবিশেষের স্বার্থের লীলাভূমিতে। ব্যবহূত হয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যের নাম। দলের ভাবমূর্তি, শহীদের স্মৃতি আর সরকারি ক্ষমতাকে এভাবে জনগণের অকল্যাণে ব্যবহার করা অনৈতিক ও বেআইনি; যার প্রকাশ ঘটে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ধানমন্ডি মাঠে সর্বজনের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে। প্রশ্ন হচ্ছে, ধানমন্ডিবাসীর মাঠ কোন প্রক্রিয়ায় লিমিটেড কোম্পানির হয়ে গেল?
আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা কেন সরকার বাস্তবায়ন করেনি? কেন মাঠের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা হয়নি? কেন গেটের তালা ভেঙে পরিবেশবাদী জনতাকে সেখানে প্রবেশ করতে হলো? কেন সর্বসাধারণের ভূমিতে প্রবেশের দায়ে মামলা গ্রহণ করা হলো? একসময় উত্তর আমেরিকায় স্বর্ণলোভীদের উদগ্র আগ্রাসী অভিযান চলত। এর নাম হয়েছিল ‘গোল্ড রাশ’। বাংলাদেশে এখন চলছে ‘ল্যান্ড রাশ’। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার যোগসাজশে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী, ল্যান্ড ডেভেলপার, রাজনীতিবিদ ও আমলা সর্বজনের জমি, খাসজমি, নদী-নালা-বন-পাহাড় গ্রাস করে চলেছে। ভূমির মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ার কারণও এটাই যে ভূমি দখল ও বিক্রিই হলো সহজে বড়লোক হওয়ার উপায়। ধানমন্ডি মাঠসহ সারা দেশে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকা খেলার মাঠগুলো আসলে সর্বসাধারণের এজমালি মালিকানাধীন সম্পত্তি। এর ওপর ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর বা কোম্পানির মালিকানা চাপিয়ে দেওয়া লুণ্ঠনেরই আরেক নাম। আইন ও সরকারের নির্বাহী বিভাগ কি এতই দুর্বল যে তারা এই অন্যায়ের দর্শক কিংবা সহযোগীতে পরিণত হচ্ছে? অবিলম্বে ধানমন্ডি মাঠ অবমুক্ত করে দেওয়া হোক। রাজধানীর এই বিরল সবুজ অঙ্গনে শিশু-কিশোরসহ সর্বশ্রেণী ও পেশার মানুষদের বিচরণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ক্লাব কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শুধু এই মাঠটি নয়, রাজধানীর সব মাঠ ও ক্রীড়াঙ্গনকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জবাবদিহি ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রতিষ্ঠাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.