ঘুষ দিলে কাজ মেলে যেখানে by সালমান ফরিদ

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোতে অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ‘ইওআই প্রজেক্ট’-এ কোন কাজ বড় অংকের অর্থলেনদেন ছাড়া হয় না। সর্বশেষ পরিচালক নিয়োগে মানা হয়নি সরকারি নিয়ম- এমন অভিযোগ এখন প্রতিষ্ঠানের দিকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি কথা চাউর হয়েছে, শিক্ষাব্যুরোতে ঘুষ দিলে কাজ পাওয়া যায়, যোগ্যতা লাগে না। এজন্য কয়েক কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। সেখানে তদন্ত ও শুনানি চলছে তাদের বিরুদ্ধে।

সমপ্রতি অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ইওআই-এর একটি প্রকল্পের ১২টি এডভোকেসি প্যাকেজের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে। একাধিক মাধ্যম থেকে জানানো হয়, এই প্যাকেজে কাজ পেতে প্রত্যেক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের ঘুষ নেয়া হয়েছে। এমনকি কালো তালিকার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। তবে সব অনিয়মের কথা অস্বীকার করে স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর প্রধান পরিচালক মোহাম্মদ নাসির। বলেন সর্বশেষ যে টেন্ডার হয়েছে তাতে কোন অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কারণ আমি যোগদানের পর ওই প্রজেক্টের চুক্তিতে শুধু স্বাক্ষর করেছি। এর আগে কমিটি প্রকল্পের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো চূড়ান্ত করেছে। আগে প্যাকেজ দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়ে থাকলে আমার কিছু করার ছিল না।
জনস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচারণা ও এডভোকেসি প্যাকেজ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো। এগুলো তারা বাস্তবায়ন করে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে। এসব প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে সেভ ডেলিভারি, হেলদি স্যানিটেশন, ওরাল ক্যানসার, ডেন্টাল কোয়ারিজ ইত্যাদি। এগুলো বিভিন্ন উপজেলা ও গুচ্ছগ্রামে বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রজেক্টের সর্বশেষ প্যাকেজ দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। গত বছরের জুলাইয়ে টেন্ডার হওয়ার পর ডিসেম্বরে চুক্তি করা হয়। অভিযোগ ওঠে, যে সব প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে তাদের অনেকে নতুন এবং দু’-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কারওই কাজের অভিজ্ঞতা নেই। ডিসেম্বরের ২৬, ২৭, ২৮ ও জানুয়ারির ১২ তারিখে তাদের সঙ্গে কাজের চুক্তি করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো। সূত্র জানিয়েছে, কাজ পেতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ বা তারও বেশি অর্থ গুনতে হয়েছে। এদিকে শুধু পরিপ্রেক্ষিত, সমাজকল্যাণ-সক এবং আজমেরী ছাড়া আর কেউই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারেনি। তারা কবে শুরু করতে তা-ও কারও জানা নেই। তবে এরই মধ্যে এক মাস সময় কেটে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাজ পাওয়ার পর তাদের পরবর্তী ৪ মাসের মধ্যে প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে না পারলে বড় জোর আরও এক মাস বাড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু এখনও ৮টি প্রতিষ্ঠান কাজ না শুরু করায় প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সব প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ শুরু করেনি তাদের কেউ কেউ একেবারেই নতুন। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা কেউ প্রতিষ্ঠানকে ‘সাব কন্ট্রাক্ট’ দিয়ে কাজ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। কারও আবার পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।
প্রধান কর্মকর্তা নিয়োগে নিয়ম মানা হয়নি: স্বাস্থ্য শিক্ষাব্যুরোর প্রধান কর্মকর্তা বা পরিচালক মোহাম্মদ নাসিরের নিয়োগে চাকরি বিধিমালা মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পাবলিক সার্ভিস কশিমনের ৯৭ গ্রেডেশন তালিকা অনুসরণ না করে তাকে পদায়ন করা হয়েছে। ২০০৫ সালে এখানে যোগদানের পর ২০১৩ সালের ১৭ই নভেম্বর তাকে ডেপুটি চিফ হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর পরের মাসের ১৭ তারিখে তিনি দায়িত্ব নেন প্রধান কর্মকর্তার। মাত্র এক মাসের মাথায় প্রধান কর্মকর্তা হলেও তার সিনিয়র ছিলেন আরও অন্তত ৩ জন কর্মকর্তা। তাদের পদোন্নতি না দিয়ে সদ্য এক ধাপ পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাকে প্রধান পদে বসানো হয়। তিনি স্থলাভিষিক্ত হন আবদুল ওয়াহিদ আকন্দের। তবে নিজের নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন নাসির। তবে স্বীকার করেন যে, তার উপরে আরও অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা প্রধান হওয়ার যোগ্য। বলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যেহেতু দুদকে অভিযোগ রয়েছে তাই দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তাদের মধ্যে অধিকতর ‘ফ্রেশ’ কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর সেটা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে।

No comments

Powered by Blogger.