ক্রিমিয়া ছাড়তে রাশিয়ার চরমপত্র

ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্থানরত দেশটির সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে রাশিয়া। এ চরমপত্র অনুযায়ী গ্রিনিচ মান সময় গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার (বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টা) মধ্যে এ বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, না হলে হামলার মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে এই আলটিমেটামের আগে পাশ্চাত্যের কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও উপদ্বীপটিতে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও সংহত করেছে রাশিয়া। হাজার হাজার রুশ সেনাসদস্য ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো গতকাল জানায়, রাশিয়ার ব্লাক সি ফ্লিট বাহিনীর প্রধান আলেকজান্ডার ভিটকো সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ‘ক্রিমিয়া অঞ্চলজুড়ে’ আক্রমণের ওই হুমকি দেন। এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছিলেন, রাশিয়া ‘অতি-জাতীয়তাবাদী হুমকির’ জবাব দিয়ে চলেছে। এমন টান টান উত্তেজনার মধ্যে ইউক্রেন তার সামরিক বাহিনীকে আগ্রাসন মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি অধিকতর আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে দেশটি। মস্কো ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন’ করায় বিশ্বের শিল্পোন্নত সাতটি দেশ নিন্দা জানিয়েছে।
তবে সের্গেই লাভরভ বলেছেন, তাঁরা ইউক্রেনে রুশ নাগরিক ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছেন। সেখানকার ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত’ রুশ সেনাদের অবস্থান জরুরি। ক্রিমিয়া এলাকায় রুশ তৎপরতা: ক্রিমিয়ায় অবস্থানরত সাংবাদিকেরা জানান, অঞ্চলটি এখন কার্যত রুশ বাহিনীর দখলে। তবে এ জন্য তাদের একটি গুলিও খরচ করতে হয়নি। ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের দুটি বড় সামরিক ঘাঁটি ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী। বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা তাদের নিয়ন্ত্রণে। রুশ সেনারা ক্রিমিয়ার সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। নতুন করে রুশ অভিজাত বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য ক্রিমিয়ায় পৌঁছার পর এখন তাঁদের সংখ্যা ইউক্রেনের সেনাদের চেয়ে বেশি।ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী খবর দিয়েছে, রাশিয়া ও ক্রিমিয়াকে বিভক্তকারী একটি চ্যানেলের রুশ অংশে সামরিক যানের একটি বহর প্রস্তুত হচ্ছে। রুশপন্থী সেনারা ক্রিমিয়ার পূর্ব এলাকায় একটি ফেরি টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স-ইউক্রেন বলেছে, রুশপন্থী কিছু কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ক্রিমিয়ার রাজধানী সিমফারপুলে ইউক্রেনের নৌ-সদর দপ্তরে ঢুকে নৌবাহিনীকে তাঁদের আনুগত্য স্বীকারের চেষ্টা করেছেন। তবে নৌ কমান্ডাররা গতকাল ইউক্রেনের প্রতি তাঁদের আনুগত্যের কথা নিশ্চিত করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতা: ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকার রুশ সেনাদের ফিরে যেতে বাধ্য করতে অধিকতর আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, চলমান সংকট সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আশা করলেও কিয়েভ এখন সামরিক বাহিনী সুসংহত করার দিকে জোর দিচ্ছে। ইউক্রেনজুড়ে পুরুষ নাগরিকদের কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠানো হচ্ছে, যাতে সোমবার থেকে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। কূটনৈতিক তোড়জোড়: সংকট সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে জোরদার হয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও। এ ক্ষেত্রে কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছে জার্মানি। দেশটি জানায়, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথা হয়েছে। এ সময় পুতিন ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধিদল গঠনে রাজি হয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর জোট ন্যাটো জানায়, তারা ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠাতে এবং মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংলাপে বসতে চায়। জাতিসংঘ গত রোববার জানায়, ‘বাস্তব অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ’ করতে সংস্থার ডেপুটি মহাসচিব জান ইলিয়াসন ইউক্রেনে যাচ্ছেন। মহাসচিব বান কি মুন গতকাল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বর্তমানে কিয়েভে আছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও আজ মঙ্গলবার কিয়েভে যাচ্ছেন। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.