মুরসির ৫২৯ সমর্থকের মৃত্যুদণ্ড

মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ও মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসির ৫২৯ জন সমর্থকের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন একটি আদালত। বিচার শুরুর তিন দিনের মাথায় গতকাল সোমবার মাত্র দুই সেশন শুনানির পর আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার শুনানি চলাকালে দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের পক্ষে কাউকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ব্রাদারহুডের প্রধান নেতা মোহাম্মদ বাদিও রয়েছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা এবং জনগণ ও তাদের সম্পদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তবে দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়া রায় অনুমোদনের জন্য দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের কাগজপত্রসহ রায়ের নথি মিসরের গ্রান্ড মুফতির কাছে পাঠানো হবে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মিসরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণে মিনার একটি আদালতের বিচারক ৫২৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় দেন। মিসরের ইতিহাসে এক রায়ে এত ব্যক্তিকে দণ্ড দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। রায়ে ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে ১৪৭ জনকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়।
অন্য আসামিরা কেউ জামিনে, কেউবা পালিয়ে আছেন। আসামিদের পক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, তাঁদের কাউকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁরা বিচারের এই প্রক্রিয়াকে ‘সব ধরনের আইনি মূল্যবোধকে’ পাশ কাটানো বলেও উল্লেখ করেন। অভিযুক্ত এক ব্যক্তির আইনজীবী ইয়াসির জিদান অভিযোগ করেন, শুনানি ও রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে ঢোকার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে বাধা দেন। তাঁর মতো বেশ কয়েকজনের সঙ্গেই এমন আচরণ করা হয়েছে। দণ্ড পাওয়া এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত শনিবার বিচার শুরু হয়। ওই দিনই নিরপেক্ষ বিচারক প্যানেল নিয়োগের জন্য আদালতে আবেদন জানান অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনজীবীরা। কিন্তু আইনজীবীদের সেই আবেদন নাকচ করা হয়। দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিলের আগে চূড়ান্ত বিচারের জন্য আদালত বসছেন না। এই সময়ের মধ্যে দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের আপিল করতে হবে। তার আগে এই রায়ের নথি মিসরের গ্রান্ড মুফতির কাছে পাঠানো হবে। রায়ের নথির সঙ্গে দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের পক্ষের কাগজপত্রও পাঠানো হবে। মিসরের আইন অনুযায়ী গ্রান্ড মুফতিই যেকোনো মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। লন্ডনে ব্রাদারহুডের মুখপাত্র আবদুল্লাহ আল-হাদাদ বলেন, মিসরের আদালতের এই রায় প্রমাণ করে, দেশটিতে একনায়কতন্ত্র চলছে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে, আপিলের পর রায় পরিবর্তনও হতে পারে। তবে এটা স্পষ্ট, ফিল্ড মার্শাল আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি মিসরে পুরোপুরি একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন।
কায়রোর একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ জারি বলেন, ‘এই রায় অগ্রহণযোগ্য। মিসরের বিচারব্যবস্থা ন্যায়বিচারের পরিবর্তে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’ বর্তমানে মিসরে নিষিদ্ধ সংগঠন ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাসহ মুরসিপন্থী অন্তত এক হাজার ২০০ জনের বিচার করছে সেনা-সমর্থিত সরকার। তাঁদের মধ্যে গতকাল ৫৪৫ জনের বিচারের রায় ঘোষণা করা হলো। গত শনিবার তাঁদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার আরও অন্তত ৭০০ ব্যক্তির বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, এই ৭০০ ব্যক্তির মধ্যে মোহাম্মদ বাদিও থাকবেন। গত বছরের ৩ জুলাই মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট ও ব্রাদারহুড নেতা মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। প্রতিবাদে রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে ব্রাদারহুড। একপর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। ১৪ আগস্ট মিনায় ব্রাদারহুড-সমর্থকদের বিক্ষোভ শিবির থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ওই সহিংসতার সময় গ্রেপ্তার হন। তারপর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলা সহিংসতায় কয়েক শ মানুষ নিহত হয়। পরে ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করে মিসর সরকার। ক্ষমতাচ্যুত মুরসিও কারাগারে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলার বিচার চলছে। এর মধ্যে ক্ষমতায় থাকার সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের হত্যায় উসকানি দেওয়ার মামলায় মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বিবিসি, আল-জাজিরা ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

No comments

Powered by Blogger.