লেমশীখালী, তেলিরকাটা, বাঁকখালী ও দক্ষিণ ধুরুং কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ

সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলায় চারটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে প্রশাসন। নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনজুর আলম সিকদার ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রমিজ আহমদের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই ও ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলযোগ দেখা দিলে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নেয়।

>>তেলিরকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলার সময় আতঙ্কে কাঁদছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসিনা আক্তার বিউটি। ছবি: আব্দুল কুদ্দুস।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মনজুর আলম সিকদারের একদল সমর্থক উপজেলা সদরের বাঁকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে কয়েক শ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্ট ও সমর্থকেরা হইচই শুরু করলে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেন।
একই সময়ে একই প্রার্থীর সমর্থকেরা উত্তর লেমশীখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করেন এবং বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার ছিনতাই করেন।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুরুল আলম মিয়াজী বলেন, ব্যালট পেপার ও সিল ছিনতাই করার কারণে ভোট গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না।
পরে ঘটনাস্থল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহাবুদ্দিন তিন ব্যক্তিকে আটক করেন। এরা হলেন মনজুর আলম সিকদারের পোলিং এজেন্ট মো. ইসহাক, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসিনা বেগমের এজেন্ট নুরুল হোসেন ও নুরুল ইসলাম।

সকাল সাড়ে ১০টায় ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয় তেলিরকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

ভোটাররা বলেন, সকাল ১০টায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও একাধিক মামলার আসামি রমিজ আহমদের নেতৃত্বে একদল লোক তেলিরকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। কিছু ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানো হয়। এ সময় রমিজের হাতে অবৈধ অস্ত্রও ছিল। রমিজ আহমদ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গোলযোগ নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখেন।

বেলা ১১টায় ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয় দক্ষিণ ধুরুং হাবিবিয়া রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। মনজুর আলম সিকদারের ভাতিজা কামরুলের নেতৃত্বে একদল লোক কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। এ সময় অন্যান্য প্রার্থীর সমর্থকেরা হইচই শুরু করলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন।

ওই কেন্দ্রে উপস্থিত সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, গোলযোগ সৃষ্টি করে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারণে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। যারা গোলযোগ সৃষ্টি করেছে তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বৈরী পরিবেশে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাধারণ ভোটাররা উত্সবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়ালেও কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানোর ঘটনায় ভোটাররা হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। অনেক ভোটার নিরাপত্তার আশঙ্কায় কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী নাগরিক কমিটির প্রার্থী মনজুর আলম সিকদারের পক্ষে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এখন মনজুর আলমের পক্ষের লোকজন ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাই করলেও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। একই অভিযোগ করেন, জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী আ স ম শাহরিয়ার চৌধুরী।

তবে ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে মনজুর আলম সিকদার বলেন, অন্য প্রার্থীরা পরিকল্পিতভাবে ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাই করে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার রটাচ্ছেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও মো. মমিনুর রশিদ বলেন, গোলযোগের কারণে চারটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্রের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.