স্নায়ুযুদ্ধের নতুন রূপ!

ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের নৌবাহিনীর সদর দপ্তরের প্রধান
ফটক গতকাল সরিয়ে দেয় রুশপন্থীরা। এ সময় রুশ
বাহিনীকে সদর দপ্তরের সামনে টহল দিতে দেখা যায়।
এক মাস আগেও অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক মানচিত্রে ক্রিমিয়াকে খুঁজে পেতেন না। কিন্তু রাশিয়া ক্রিমিয়ার ‘দখল’ নেওয়ার পর মানচিত্রে পরিবর্তন এসেছে। ক্রিমিয়ার বিষয়টি ২৫ বছর ধরে ওয়াশিংটন-মস্কোর চড়াই-উতরাইয়ের সম্পর্ককে হয়তো একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 
১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়ালের পতনের পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ অনেকটা কমতে শুরু করে। এই সময়ে বিভিন্ন সংকট এসেছে—তা মেনে নিয়েই দুই পক্ষ নিজেদের মতো করে বিচিত্র উপায়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন সংকটের সময় সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হলেও অস্বস্তিকর ভারসাম্য নিয়ে আবারও কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেছে। কসোভো, ইরাক ও জর্জিয়া ইস্যুতে ওয়াশিংটন-মস্কোর টানাপোড়েন এবং ফিরে আসার ভালো উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে ক্রিমিয়ায় গণভোটের পর দ্রুত তাকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আদেশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সই এবং তার পরদিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া-সংক্রান্ত বিলে সই রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে এক নতুন অধ্যায়ে নিয়ে গেছে। এই অধ্যায়কে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এবার বোধ হয় এই দুই দেশের মধ্যে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হলো।
তবে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু না হলেও ওয়াশিংটন-মস্কোর এবারের টানাপোড়েন যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এই টানাপোড়েন থেকে বেরিয়ে আসাও হবে অত্যন্ত কঠিন। দুই দেশের নেতাদের কথাবার্তাও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্রিমিয়া নিয়ে উসকানি না দিতে পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেও দাবি করেন তিনি। একই দিন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্রিমিয়ার ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়াকে ‘জমি দখল’ বলে আখ্যা দেন। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে উন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-৮ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর আগে রাশিয়ার ১১ জন নেতার বিরুদ্ধে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি ও তাঁদের সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে পররাষ্ট্র দপ্তরে দায়িত্ব পালনকারী রাশিয়া বিশেষজ্ঞ টবি টি গ্যাটি বর্তমান ওয়াশিংটন-মস্কোর সম্পর্ককে ‘ভূমিকম্পের’ সঙ্গে তুলনা করে বলেন, রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা মাত্র চার নয়। স্নায়ুযুদ্ধ ফিরে না এলেও ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়াল পতনের পর যে স্বপ্ন দেখা হচ্ছিল, তা উড়ে যাবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী স্টিফেন জে হ্যাডলি বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে যে পর্যায়ে চলে গেছে, তা কাটিয়ে ওঠা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন হবে। নিউইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.