৩৯ বিল পাস অনিশ্চিত

সাধারণ নির্বাচনের আগে ভারতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে বিভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেস-বিজেপি দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে৷ প্রধান এই দুই দলের টানাপোড়েনের অবসানে গতকাল মঙ্গলবার সংসদীয় মন্ত্রী কমলনাথ ও লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি৷ বিরোধীরা এমন কোনো আশ্বাস দেননি, যাতে সংসদের বাজেট অধিবেশন নির্বিঘ্নে কাটবে এবং সরকার যে ৩৯টি বিল পাস করাতে চাইছে, তা সম্ভব হবে৷ আজ বুধবার ​েলাকসভার দুই সপ্তাহের অধিবেশন শুরু হচ্ছে৷ প্রধানত চারটি বিষয় নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বিজেপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের মতপার্থক্য চরমে৷ এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন বিলটি ঝুলে আছে৷ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে জবরদস্তি সেটি রাজ্যসভায় পেশ করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সরকারকে বারবার বিলটি পাস করানোর বিষয়ে আশ্বাস দিলেও সফল হননি৷ নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয়ে কৃতিত্ব দিতে চায় না বিজেপি৷ সরকারের মূল লক্ষ্য এই অধিবেশনে তেলেঙ্গানা বিলে সংসদীয় অনুমোদন আদায় করা৷ বিজেপি পৃথক তেলেঙ্গানার পক্ষে হলেও অন্ধ্র প্রদেশে যেভাবে সব রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করছে, তাতে বিজেপি কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিতে চায়৷ লোকসভার নির্বাচনের আগে তেলেঙ্গানা হয়ে গেলে কংগ্রেস অন্তত নতুন রাজ্যের ১৭টি লোকসভা আসন নিজেদের দিকে টেনে নিতে পারে৷ এই সুবিধা কংগ্রেসকে দিতে চায় না বিজেপি৷ তারা মনে করছে,
ভোট পর্যন্ত তেলেঙ্গানা ঠেকিয়ে রাখতে পারলে কংগ্রেসের দুই কূলই যাবে৷ তাই গতকাল মনমোহন সিং তেলেঙ্গানা নিয়ে সবার সহযোগিতা চাইলেও বিজেপি স্পষ্ট কিছু বলেনি৷ লোকপাল নিয়োগের কমিটি গঠন নিয়েও কংগ্রেস-বিজেপি বিরোধ তীব্রতর৷ বিল অনুযায়ী দেশে লোকপাল নিয়োগ করবে পাঁচ সদস্যের এক কমিটি৷ সেই কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, লোকসভার বিরোধী নেতা বা নেত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি অথবা তাঁর মনোনীত অন্য কোনো বিচারপতি এবং এমন একজন আইনজ্ঞ, যাঁকে এই চারজন বেছে নেবেন৷ পঞ্চম ব্যক্তির মনোনয়ন নিয়ে কমিটির অন্যদের সঙ্গে লোকসভার বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজ একমত হতে পারেননি৷ বিজেপি সূত্রের খবর, গত সোমবার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পি পি রাওয়ের নাম পঞ্চম সদস্য হিসেবে প্রস্তাব করেন৷ সুষমা আপত্তি জানিয়ে বলেন, পি পি রাও কংগ্রেসেরই লোক৷ পঞ্চম প্রার্থী হিসেবে সুষমা তিনজনের নাম প্রস্তাব করেন৷ সুষমা বৈঠকে বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর পর দেশে লোকপাল গঠিত হচ্ছে৷ দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তা করতে হবে৷ কিন্তু তাঁর প্রস্তাব ১-৩ ভোটে নাকচ হওয়ায় তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির শরণাপন্ন হচ্ছেন৷ ভোটের আগে জনমত জরিপ নিয়েও কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির বিরোধ শুরু হয়েছে৷ গতকাল সব দলকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনসংক্রান্ত এক আলোচনায় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ভোটের আগে জনমত জরিপ নিষিদ্ধ করার জোরালো দাবি তোলা হয়৷ বিজেপিসহ অনেক দল তাতে আপত্তি জানায়৷ বামপন্থীরা আবার শর্তাধীন অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন৷ সংসদে এই দ্বন্দ্বের প্রতিফলন প্রথম দিন থেকেই ঘটে কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়৷

No comments

Powered by Blogger.