দাঙ্গায় মোদির ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য, ক্ষুব্ধ বিজেপি

রাহুল গান্ধী
ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ১০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকার কংগ্রেস-বিজেপি দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তুলেছে। গত সোমবার রাতে এক বেসরকারি টেলিভিশনে দীর্ঘ ওই সাক্ষাৎকারে রাহুল ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ আনেন। তুলনা টেনে ১৯৮৪ সালের শিখ-দাঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিল্লিতে তৎকালীন সরকার দাঙ্গা থামাতে সচেষ্ট ছিল। সাক্ষাৎকারে রাহুলের এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপি। দলটি তাঁর এই মন্তব্যকে ‘সত্যের বিকৃত উপস্থাপনা’ বলে উল্লেখ করে বলেছে, কোনো বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে যা হয়, এ ক্ষেত্রেও তা দেখা গেল। লোকসভার আগামী নির্বাচন ধর্মনিরপেক্ষ বনাম সাম্প্রদায়িকতার লড়াই হতে যাচ্ছে বলে যাঁরা মনে করছেন, এই সাক্ষাৎকার ও বিতর্ক সেই ধারণাকে আরও দৃঢ় করবে। নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁর শেষ সংবাদ সম্মেলনে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার সঙ্গে তিনি একমত কি না,
রাহুল এমন প্রশ্ন দুবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন, ‘১৯৮৪ সালে দিল্লি ও ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। দুটোই ভয়াবহ ব্যাপার। পার্থক্য হলো, ’৮৪ সালে সরকার দাঙ্গা থামানোর সব রকম চেষ্টা করেছিল, গুজরাটে হয়েছিল ঠিক উল্টোটা। গুজরাট সরকার দাঙ্গাকে আরও উসকে দিতে প্ররোচনা জুগিয়েছিল।’ এই মন্তব্যের পিঠাপিঠিই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, দিল্লির দাঙ্গায় কংগ্রেসের কারও হাত ছিল কি না। রাহুল অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এ জন্য কংগ্রেসের কোনো কোনো নেতাকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে গুজরাট দাঙ্গা ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে এই মন্তব্য কংগ্রেস-বিজেপি দ্বৈরথকে ক্ষুরধার করে তুলেছে। বিজেপির একাধিক নেতা গতকাল মঙ্গলবার রাহুলের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির মন্তব্য, ‘কোনো বিষয়েই রাহুলের যে কোনো জ্ঞান নেই, তা বোঝা গেল। দিল্লির দাঙ্গায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আজও সাজা হয়নি। আর গুজরাটের দাঙ্গায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মোদিকে ক্লিন চিট দিয়েছে। দিল্লিতে পুলিশের গুলিতে একজন দাঙ্গাবাজও মরেনি।
অথচ গুজরাটে পুলিশের গুলিতে ৩০০ জন মারা গেছে।’ রবিশংকর প্রসাদ বলেন, ‘রাহুলের বাবা রাজীব গান্ধীই বরং দিল্লি-দাঙ্গাকে সমর্থন করে বলেছিলেন, মহিরুহের পতন ঘটলে ধরিত্রী কেঁপে ওঠে।’ বিজেপির সহযোগী শিরোমনি অকালি দল নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরালের ছেলে নরেশ গুজরাল রাহুলের সমালোচনা করে বলেন, ‘দিল্লিতে তিন দিন ধরে যা ঘটেছিল, তাকে দাঙ্গা বলা যাবে না। সেটি ছিল শিখদের একতরফা হত্যা। প্রায় তিন হাজার শিখ নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল। সেনা নামানো হয়েছিল তিন দিন পর। অথচ গুজরাটে ১২ ঘণ্টার মধ্যে সেনা নেমেছিল।’ রাহুলের সাক্ষাৎকার প্রচারের পর শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা কংগ্রেসের সমালোচনাই শুধু করেননি, দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনাও তাঁরা করেন। বিজেপি ও তাদের সহযোগী দলগুলোর দাবি, দিল্লির দাঙ্গার জন্য কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী কিংবা প্রয়াত রাজীব গান্ধী ক্ষমা চাননি। সাক্ষাৎকারে রাহুলও ক্ষমা চাইলেন না। কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী অম্বিকা সোনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই ক্ষমা চেয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.