দেশ ও সময়ের দাবি উন্মুক্ত গণতন্ত্র by মিলন মিয়াজী

এ দেশে নেতা-নেত্রীরা বহু বিশেষণে বিশিষ্টতা পান, পরে কালের পরিক্রমায় তারাই প্রমাণ করেন সবই ভুল। শ্রদ্ধেয় জনৈক নেতাও বলেই ফেললেন, আমার চারদিকে চাটুকার দল, তিনি অবশ্য চাটুকার হতে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয় না।
করলে উত্তরোত্তর এ ধরনের চরিত্রের লোক বৃদ্ধি পেতো না। চাটুকারা যতই বলুক অমুক আদর্শের সৈনিক, তমুক আদর্শের সৈনিক যতই বলুক না কিন্তু আদর্শের ধরন কি? তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে তার রূপরেখা সম্পর্কে তারা কিছু জানেন বলে আমার মনে হয় না। এগুলো নিতান্তই চটুল কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা জানি, কোন আদর্শ বাস্তবায়ন করতে সমমনা লক্ষ লোকের দরকার জনগণের কাছে সে আদর্শের বাণী পৌঁছাতে। আদর্শগত দ্বন্দ্ব নয়, শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে, অত্যাধুনিক মিডিয়ার যুগে এত লোকের দরকার কি? এ অবস্থায় সুন্দর সমাধান দিতে পারে উন্মুক্ত গণতন্ত্র। কারণ, এখানে সরকার পরিচালনায় এবং সমগ্র দেশ উপস্থাপনায় সর্বমোট ৩৬১ জনবল প্রয়োজন। এই তো গেল মহান বিজয় দিবস। কেউ কেউ তার প্রতিষ্ঠান কাগজের জাতীয় পতাকা দ্বারা সাজালো ভাল দেশপ্রেমিক। কিন্তু আজ ওই সব কাগজের পতাকা ধুলায় গড়াগড়ি খায়। দেশপ্রেমিক বোঝানোর এ ধরনের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত অনেকেই সরাসরি রাজনৈতিক দলের সদস্য। এদের অজ্ঞতা এত বেশি জাতীয় পতাকার মর্যাদা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল নয় কিন্তু উন্মুক্ত গণতন্ত্রে এ ধরনের লোকের অস্তিত্ব নেই। কারণ, এ ক্ষেত্রে প্যানেলগুলো সাজবে বিবেকবান জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য করে। এরা জানে কাকে কতটুকু মর্যাদা দেয়া উচিত। এই জাতি বিবেকবান, একটি বাস্তবতা থেকে তা সহজেই বোঝা যায়, মরহুম জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পরিবেশ পরিস্থিতি কিছুটা বুঝি। তার ক্ষমতা আহরণে খুব স্বচ্ছতা না থাকলেও তিনি নিজেকে ভাল শাসক ও সাধু হিসেবে পরিচয় দিতে পেরেছিলেন। এ জাতি এর প্রতিদান দিয়েছিলেন ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার ছাত্রদল-নির্ভর দলকে জয়ী করে। বর্তমানে জনগণ ভাল ব্যক্তি এবং দল খুঁজে পাচ্ছেন না, তাই তারা অসহায়, বরং তারা বিরক্তি অনুভব করছেন তাদের জড়িয়ে নেতাদের মিথ্যা কথা বলার জন্য। কিন্তু উন্মুক্ত গণতন্ত্রে এ অবস্থা হবে না, এখানে দেশবরেণ্য সন্তানরা দেশ পরিচালনায় আসতে চাইবেন শুধুমাত্র সম্মানের জন্য। এ দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর রীতিনীতি অনুসারে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক পরিবার। তাদের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা কতটা আছে আমি জানি না, তবে বছরের পর বছর আছেন তা দেখি। কিন্তু উন্মুক্ত গণতন্ত্রে সে সুযোগ নেই। ১০টি প্যানেলে ১০ক্ম৫০=৫০০ জন প্রার্থী হচ্ছেন যে ৩টি প্যানেল সবচেয়ে কম ভোট পাবে ওই প্যানেল তিনটি পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, এতে কমপক্ষে ১৫০ জন নতুন প্রতিযোগী আসবেন পরবর্তী নির্বাচনে। এ ছাড়াও দেশের সম্মানিত সন্তান তিনবারের বেশি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং দু’বারের বেশি দেশ পরিচালনায় থাকতে পারবেন না। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতা সৃষ্টি হবে। এবার দুর্নীতিতে আমরা ১৬তম অর্থাৎ দুর্নীতির রিকটার স্কেলে আমরা বিশ্বের বুকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবেই রয়ে গেলাম। এ দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। এরা নিজের দোষ, ভুল অকপটে স্বীকার করার সাহস রাখে এবং নিজের অন্যায়কারী সন্তানের বিচার করার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং ২০ ভাগ লোকের যাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত, তাদের দুর্নীতির দায়ভার তারা নেবে কেন?

এ দেশে মোটামুটিভাবে তিন ধরনের লোক দুর্নীতিগ্রস্ত
(১) চাকরিজীবী দুর্নীতিবাজ- এরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়ে চাকরি নিচ্ছে। সুতরাং তাদের মেধা আছে, মূলধন নেই। একই ভাবে বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিই মূলধন।
(২) ব্যবসায়ী দুর্নীতিবাজ- এরা কিছুটা মেধা ও মূলধন খাটান। অনেক সময় ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ আছেন, তাদের বেলায় দেখতে হবে তারা রাজনীতি হতে কোন ফায়দা নেন কিনা।
(৩) রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজ (বেশির ভাগ)। এরা রাজনীতির প্রমোশন পেতে কোন মেধা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এমন কোন প্রমাণ নেই এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূলধন খাটিয়েছে প্রমাণ মিলে না। উপরের দু’টি এককভাবে দুর্নীতি করেন, নিচেরটি দল বেঁধে দুর্নীতি করেন। এটা আমার কথা নয়, তাদেরই কথা।
রাজনৈতিক দুর্নীতি যতটা কমবে দেশের মোট দুর্নীতি ততটাই কমবে। সুতরাং দেশ ও সময়ের দাবি উন্মুক্ত গণতন্ত্র।

No comments

Powered by Blogger.