সবাইকে নিয়ে নির্বাচন হোক

গত শনিবার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে চলমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মনোভাবই প্রকাশিত হয়েছে। সিপিডিসহ চারটি বেসরকারি সংগঠন আয়োজিত এই সেমিনারে বর্তমান সংকট নিরসনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত এবং সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদ ভেঙে দিয়ে তিন মাসের মধ্যে সবার অংশগ্রহণে যে বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন; তা সবারই মনের কথা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন চলমান সমস্যার গঠনমূলক সমাধান করবে না। একজন ব্যবসায়ী নেতা সংকট নিরসনে গণতান্ত্রিক দলগুলো ব্যর্থ হলে দেশে উগ্র মৌলবাদী শক্তির পুনরুত্থান ঘটবে বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তার সঙ্গেও দ্বিমত করার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই দায় রয়েছে। সরকার যেমন একতরফা নির্বাচন দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, তেমনি বিরোধী দলও সেই নির্বাচন প্রতিরোধের নামে দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে জামায়াত-শিবিরের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ। এর প্রতিকার কী?
আমরা মনে করি, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। বিচার চলবে। কিন্তু সেই বিচারের দোহাই দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা যাবে না। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দল কেন ভোটারবিহীন ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচনের কেলেঙ্কারি মাথায় নেবে? এ ধরনের একটি নির্বাচন করার ফলে দেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখা দেবে, তাতে গত পাঁচ বছরে ক্ষমতাসীন দলটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছিল, তা-ও ম্লান হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ যদি স্বৈরশাসকদের মতো পোড়ামাটি নীতি নিয়ে দেশ চালাতে না চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে বর্তমান তফসিল বাতিল করে সমঝোতার ভিত্তিতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। একই সঙ্গে বিরোধী দলকে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে হবে। নাগরিক সমাজের আহ্বানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি।
দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় উপনীত হলে কেবল নির্বাচন নয়, দেশ শাসনের বিষয়েও মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় তিন জোটের রূপরেখাই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছিল। এ প্রসঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সেই বাণী স্মরণ করতে বলব। তিনি বলেছিলেন, ‘বিবাদে আমি না প্রতিপক্ষ কে জয়ী হলো সেটি বড় কথা নয়, বড় হলো জনগণের ওপর এর প্রতিক্রিয়া কী পড়ল।’ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সম্প্রতি একটি সভায় বলেছেন, ‘সংবিধান রক্ষার চেয়েও বেশি জরুরি দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা।’ আশা করি, সরকার সমঝোতার শেষ সুযোগটি হেলায় হারাবে না।

No comments

Powered by Blogger.