দ. সুদান গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে : ওবামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বৃহস্পতিবার অবিলম্বে দক্ষিণ সুদানে চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে তিনি হুশিয়ারি জানিয়েছেন। এর আগে ওবামা জানান, সুদানে মার্কিন জনগণ ও স্বার্থ রক্ষায় তিনি সহিংসতাকবলিত দেশটিতে বুধবার ৪৫ সৈন্য মোতায়েন করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, সুদানে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সহিংসতা দেশটিকে আবার তার ফেলে আসা কালো দিনগুলোতে নিয়ে যেতে পারে। সুদানে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা বিশ্বের নবীনতম দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে আরও বলেন, রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন বা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য চলমান এই সংঘাত অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উত্তেজক বাগাড়ম্বর ও সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিবদমান সব পক্ষকে তার প্রতিবেশীদের সুপরামর্শ মেনে চলতে, পরস্পরের সঙ্গে সংলাপে বসতে এবং শান্তি ও পুনরেকত্রীকরণের জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র খুব বেশি জরুরি কাজে নিয়োজিত ছাড়া তার সব দূতাবাসকর্মীদের দক্ষিণ সুদান ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবায় অবস্থিত মার্কিন মিশনের সব স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতিগত নুয়ের যুবকরা জংলি রাজ্যে অবস্থিত জাতিসংঘের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে শান্তিরক্ষী বাহিনীর ৩ ভারতীয় সদস্যকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরও নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে আশংকা করা হচ্ছে।ওবামা বলেছেন, দক্ষিণ সুদানের এই সংকট থেকে উত্তরণের সুযোগ রয়েছে। দেশটির নেতৃবৃন্দ এই সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাধানের জন্য একত্রে কাজ করতে পারেন। দক্ষিণ সুদানে ইতিমধ্যেই অনেক রক্ত ঝরেছে এবং অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। তিনি সুদানের জনগণের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দেশটিতে শান্তি ও একতা ফিরিয়ে আনতে সাহসিকতার পরিচয় দিতে নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।সেনাদল পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : দক্ষিণ সুদানে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও হানাহানির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে মার্কিন দূতাবাস ও তার কর্মকর্তাদের সুরক্ষার জন্য ৪৫ সদস্যের এক সেনা দল পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কংগ্রেসকে লেখা এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই তথ্য জানান। আগামী বুধবার ওই সেনা দল দক্ষিণ সুদানে পৌঁছবে।
চিঠিতে ওবামা জানান, দক্ষিণ সুদানে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ দেশটিকে অতিতের কালো অধ্যায়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না হচ্ছে ততদিন মার্কিন নাগরিক ও তাদের সম্পদ রক্ষায় ওই সেনারা সেখানে মোতায়েন থাকবে।শান্তি বজায় রাখার প্রতি দক্ষিণ সুদানের নেতাদের পূর্ব প্রতিশ্র“তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবামা তাদের সাহসী হয়ে সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, অনেকদিন ধরেই আফ্রিকার নবীনতম দেশটির দুই জাতিগোষ্ঠী দিনকা এবং নুয়েরের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা লাভ করার পর অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিজেদের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। এরপর মাঝে মাঝেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও গত রোববার থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মঙ্গলবার এক অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে জাতিসংঘের দূতরা জানান, জুবায় গত রোববার থেকে শুরু হওয়া গত দু’দিনের সংঘর্ষে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নুয়ের গোত্রভুক্ত প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ওই সংঘাত শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট কির সোমবার জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে বলেন, রোববার রাতে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচার এক দল সেনা সদস্যের সহায়তায় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালান। কিন্তু সরকারের অনুগত সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া সব নাগরিককে দক্ষিণ সুদান ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.