কেনিয়ায় উড়াল শৌচাগার

শৌচাগার ব্যবহার মানুষের জন্য খুব সাধারণ একটা বিষয় ও জীবনের অঙ্গ হলেও, কেনিয়ার মতো আফ্রিকার বহু দেশেই কিন্তু তেমন নয়। সেখানে কার্যকর, পরিষ্কার পয়ঃপ্রণালী না থাকায় অনেকের কাছেই ঠিকঠাক ‘টয়লেট’-এ যাওয়াটা একটা স্বপ্ন! বিশ্বের বহু দেশেই এ ধরনের একটা দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। রোগ-জীবাণু ভর্তি ময়লা শৌচালয়, যেখানে না আছে পানি, না আছে অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা। অনেক জায়গায় আবার কোনো শৌচাগারই নেই। এই যেমন, কেনিয়ার কিবেরিয়া অঞ্চল। শৌচাগার নেই বললেই চলে। কারণ, সেখানে মাথাপিছু প্রতি ৩০০ জন মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একটি শৌচালয়। সচরাচর যেটা হয়ে থাকে, সেটা হল বেগতিক অবস্থায় পড়লে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করে মাঠে-ঘাটে ফেলে দেয়াটাই তাদের আদি অভ্যাস। তবে আর নয়। কারণ, এবার সেখানে আসছে ‘ফ্লাইং টয়লেট’ বা ‘উড়াল শৌচাগার’। কেনিয়ার এই দরিদ্র মানুষদের খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার অভ্যাসটা না পাল্টিয়েই এই ‘উড়াল শৌচাগার’ নামের প্রকল্পটি তৈরি করেছেন ক্যামিলা ভিরসিন। তিনি সুইডেনের ‘পিপিপল’ নামের একটি সংস্থার সঙ্গে জড়িত। বলা বাহুল্য, মানব স্বাস্থ্য রক্ষায় ‘স্যানিটেশন’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট জাতিসংঘ। ‘পিপিপল’ তাদেরই দেখিয়ে দেয়া পথ অনুসারে কাজ করছে।
এই প্রকল্পের আওতায় কিবেরিয়ার মানুষ এবার থেকে তাদের পুরাতন অভ্যাস না পাল্টে আগের মতোই মলত্যাগ করতে পারবেন। তবে সাধারণ প্লাস্টিকে নয়, বরং পরিবেশবান্ধব বা ‘বায়ো-ডিগ্রেডেবেল’ এক ধরনের ব্যাগে। দেখতে পাতলা, অথচ হাঁড়ির মতো মুখবিশিষ্ট এই ব্যাগগুলোর ভেতরে রয়েছে গুঁড়ো করা ইউরিয়া। এটা এমন এক অ্যামোনিয়া, যা একদিকে যেমন ক্ষতিকারক প্যাথোজেনকে দূরে রাখে, তেমনই এর ফলে থাকে না কোনো দুর্গন্ধ। ক্যামিলা ভিরসিন জানান, এগুলো দু-তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এছাড়া, কিবেরিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় কিছু ‘ড্রপ-অব পয়েন্ট’ করা হয়েছে, অর্থাৎ এমন কিছু জায়গায় চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে কয়েক সপ্তাহ অন্তর গিয়ে ওই ‘উড়াল শৌচাগার’-গুলোকে ফেলে এলেই হল। পরবর্তীতে এগুলো দিয়ে সার তৈরিরও পরিকল্পনা করছেন ভিরসিন। শুধু তাই নয়, পরিবেশবান্ধব এই শৌচাগারের নির্মাণ খরচও খুব কম। এমনকি, ‘কোল্ড ড্রিংক’-এর বোতলে যেমন ‘ফান্ড’ থাকে, তেমনই এটা কিনে ব্যবহারের পর ফেরত দিলে কিছু অর্থ ফেরতও পাওয়া যায়। তাই কেনিয়ার দরিদ্র মানুষের কাছে খুব দ্রুতই যে এই ‘উড়াল শৌচাগার’ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই বলেই মন্তব্য করেছেন ভিরসিন। এএফপি, এপি।

No comments

Powered by Blogger.