ইতিবাচক সাড়া আশা করছি: বিএনপি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে পাঠানো বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব সম্বলিত চিঠিটির ইতিবাচক সাড়া আশা করছে বিএনপি।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, সৈয়দ আশরাফের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি, ইতিবাচক সাড়া পাবো।

এর আগে সকালেই খালেদা জিয়ার নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব সম্বলিত বিএনপির চিঠি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের হস্তান্তর করেন দলের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি সৈয়দ আশরাফের বাসায় গিয়ে মির্জা ফখরুল স্বাক্ষরিত চিঠিটি দিয়ে আসেন।

দলে ছিলেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ  জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব বরকতুল্লাহ বুলু ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি।

মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে প্রতিনিধি দলটির কাছ থেকে আপডেট পাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। প্রতি মুহূর্তে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছিলেন তিনি। তারা সেখানে পৌঁছালে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন ফখরুল।

এদিকে মির্জা ফখরুলের চিঠি পেয়েই তাকে ফোন করে চিঠির জন্য ধন্যবাদ জানান সৈয়দ আশরাফ। সংবাদ সম্মেলন করার সময়ই ফোনটি রিসিভ করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি সৈয়দ আশরাফকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আমরা আশা করি, একটি ইতিবাচক সমাধানের পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, তিনি (আশরাফ) আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি দিনাজপুরে যাচ্ছেন,  চিঠি সঙ্গে নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরে তিনি চিঠি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

অপর প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, চিঠিতে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখার প্রস্তাব রয়েছে এবং এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ঘটনাই প্রমাণ করে, সরকার সমঝোতা চায় না।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ২৫ অক্টোবর পূর্বনির্ধারিত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮  দলের ঢাকার মহাসমাবেশ ও সারা দেশে সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই করবো আমরা।

মির্জা ফখরুল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সোমবারের পুলিশি হামলা সম্পর্কে অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের অসুস্থ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে গিয়ে, চিকিৎসার তদারকি শেষে ফেরার সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়িতে হামলা হয়, লাঞ্ছিত করা হয় তদের কাউকে কাউকে। বহরের গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গা হয়, গাড়ি যেন বের না হতে পারে, সেজন্য সামনে ইট দেওয়া হয়।
অতর্কিতে কোনো কারণ ছাড়াই তারা এ হামলা চালিয়েছেন। তারা রাইফেলের বাট দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন। তারা গাড়ি ইচ্ছে করে আটকেছেন। তারা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে আটক করে নিয়ে যান। আমরা বিক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত। আমরা অবিলম্বে টুকুর মুক্তি ও হামলার জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও তদন্ত দাবি করছি।
যখন প্রধানমন্ত্রী সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছেন, যখন সঙ্কট নিরসনে বিরোধী দলীয় নেত্রী প্রস্তাব দিয়েছেন, তখন পুলিশের এ আচরণ প্রমাণ করে, সরকার সমঝোতা চায় না বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
ফখরুল বলেন, যেখানে বিরোধী দল সমঝোতার প্রস্তাব আনছে, সেখানে সরকারের এমন আচরণ জনগণেরও প্রত্যাশিত নয়।
তিনি বলেন, পেশাজীবীদের কনভেনশনেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনমনীয়তায় কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে যারা জনগণের ওপর অত্যাচার চালায়, তাদের পরিণতি হয় মর্মান্তিক বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, আমরা সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছি, সেটাকে দুর্বলতা মনে করা ঠিক নয়। আজ বেশ কিছুদিন ধরে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক কাজও করা সম্ভব হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের ২৫ অক্টোবরের সমাবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি করতে চাই। মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করছি।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমাবেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন, নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে পুলিশি প্রহরা তুলে নিন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সহ দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.