সিরিয়া হামলায় ন্যাটো নেই

ন্যাটো জোটের মহাসচিব আন্দ্রেস ফগ রাসমুসেন বলেছেন, সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তার সংস্থার নেই। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। খবর এপির। রাসমুসেন জানান, ‘সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমি ন্যাটোর কোনো ভূমিকা দেখি না। ন্যাটোকে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে এর সব সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদন লাগবে।’
যদিও বুধবার তিনি বলেছিলেন, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য যারা দায়ী তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এর আগে শুক্রবার খবর বেরিয়েছিল, ২৮ সদস্য বিশিষ্ট ন্যাটো জোটের অন্তত ১০টি দেশ সিরিয়ায় সামরিক হামলার বিরোধী। এদের মধ্যে ব্রিটেন, জার্মানি ও ইতালি অন্যতম। এদিকে, সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার ব্যাপারে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আংশিক কোনো প্রতিবেদন মেনে নেবে না সিরিয়ার আসাদ সরকার। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-মুয়াল্লেমের বরাত দিয়ে একথা জানিযেছে দেশটির সরকারি টেলিভিশন। সিরিয়ায় সফররত জাতিসংঘের পরিদর্শকরা যখন তড়িঘড়ি করে তাদের তদন্ত কাজ শেষ করে দামেস্ক ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন মুয়াল্লেম এ ঘোষণা দিলেন। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে ফোন করে বলেছেন, জাতিসংঘের তদন্তকারীরা তাদের কাজ শেষ না করলে এবং তাদের গৃহিত নমুনার পরীক্ষার ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রাসায়নিক হামলা সিরিয়া ও জর্ডানের জন্য হুমকি : সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ইসরাইল ও জর্ডানের জন্য হুমকি তৈরি করবে বলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মন্তব্য করেছেন। এ পরিস্থিতিতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য সিরিয়া সরকারকে যথাযথ জবাব দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেও জানান ওবামা। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক বৈঠক শেষে ওবামা সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।অন্যদিকে, সিরিয়ার কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশটির ওপর আগ্রাসন চালানো হলে ইসরাইলের দিমুনা পরমাণু চুল্লীসহ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালাবে দামেস্ক। সিরিয়ার ওই গবেষণা কেন্দ্র এই ৫টি স্থাপনার ছবিও প্রকাশ করেছে। সিরিয়ার কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ইমাদ রাজ্জাক বলেছেন, বিদেশী শত্র“রা তার দেশের ওপর হামলা চালালে সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনী খুব সহজেই দখলদার ইসরাইলের ওই লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর হামলা চালাতে সক্ষম হবে। ইসরাইল বলেছে, সিরিয়ার যে কোনো হামলার অত্যন্ত কঠোর জবাব দেয়া হবে। ওদিকে, ইরানি সংসদের একটি প্রতিনিধিদল সিরিয়া ও লেবানন সফরের উদ্দেশ্যে শনিবার রাজধানী তেহরান ছাড়েন। ওই অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখা এবং সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার নিন্দা জানাতে ইরানি প্রতিনিধিদল এ সফরে গেছে। ইরানের এক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদের শীর্ষ পর্যায়ের সদস্য আলাউদ্দিন বোরুজেরদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়াকে ‘কঠোর বার্তা’ দিতে বদ্ধপরিকর : ওলান্দ
ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ এবং বারাক ওবামা রাসায়নিক অস্ত্র হামলা ইস্যুতে সিরিয়াকে ‘কঠোর বার্তা’ প্রদান করছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এলিসি প্রাসাদের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয় উভয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা একমত হয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি বরদাশত করবে না। দু’দেশরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয় সিরিয়া ইস্যুতে তারা আলোচনা অব্যাহত রাখবে।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। সিরিয়া হামলার আশংকায় হঠাৎ তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া হামলার ব্যাপারে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ নেয়নি এমন ঘেষণার পরে আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের মূল্য ১ দশমিক ১৫ ডলার কমেছে। লন্ডনে কমেছে ব্যারেল প্রতি ১ দশমিক ৭ ডলার। এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.