বাশারের পাশে কেন রাশিয়া, চীন ও ইরান

সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। পশ্চিমা অনেক নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সমাজকর্মী এ নিয়ে আলোচনা করছেন। তা থেকে দৃশ্যত একটি সুপারিশই বেরিয়ে আসছে।
তা হলো সিরিয়া হামলা আসন্ন। কিন্তু ভাল কিছু বন্ধুর সমর্থন ফিরে পাচ্ছে সিরিয়া। তার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, ইরান ও চীন। প্রায় দু’ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। এ সময়ে লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তারপরও তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে। রাশিয়া কেন সিরিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে এ প্রশ্ন এখন অনেকের। দুটি কারণে সিরিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া। এক. অর্থনৈতিক ও দুই. আদর্শগত। সিরিয়ায় সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করে রাশিয়া। সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রাম-এর ফেলো জেফ্রে ম্যানকফের মতে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪০০ কোটি ডলারের বেশি অস্ত্রের চুক্তি করেছে সিরিয়ার সঙ্গে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাব বলে যে, ২০০৯ ও ২০১০ সালে প্রতি বছরে সিরিয়ার কাছে ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে রাশিয়া। যুদ্ধে প্রশিক্ষণ বিমান খাতে মস্কোর সঙ্গে ৫৫ কোটি ডলারের চুক্তি রয়েছে সিরিয়ার। অন্যদিকে রাশিয়ার আদর্শ হলো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করা। রাশিয়া সেখানে যুদ্ধ চায় না। অভ্যুত্থান চায় না। তারা বিশ্বাস করে না যে, শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন হলেই সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এক্ষেত্রে তারা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে আরব বসন্ত ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক আগ্রাসন। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করুক তাও মেনে নিতে পারছে না রাশিয়া। তারা মনে করছে, সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে নিজস্ব রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। ভূমধ্য সাগরে রয়েছে রাশিয়ার উপস্থিতি। এর মাধ্যমে তারা সিরিয়ার শাসকদের নিরাপত্তা দিতে চায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী প্রোগ্রাম পরিচালক আনা নিস্টাট বলেন, এর উদ্দেশ্য পুতিনের টিকে থাকা। তিনি তার টিকে থাকা নিয়েও আতঙ্কিত। পুতিন মনে করেন বাশার আল আসাদের পতনই শেষ কথা নয়। একদিন এমন পরিণতি তারও হতে পারে। সিরিয়ার আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র ইরান। তাদের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় ও কৌশলগত মিল। ইরান হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সিরিয়ার সরকারও শিয়া প্রধান। কিন্তু সিরিয়ার বিদ্রোহীরা সুন্নী মতাবলম্বী। এ জন্য শিয়া ইরানের সঙ্গে শিয়া বাশার সরকারের রয়েছে চমৎকার বোঝাপড়া। ইরাকের বিরুদ্ধে ৮ বছর ধরে যুদ্ধ করে ইরান। তখন তারা সিরিয়াকে তাদের একমাত্র আরব মিত্র দেশ হিসেবে স্বীকার করে। ইরানের জন্য সিরিয়া কৌশলগত একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। ইরানের প্রধান বন্ধু লেবাননের শিয়া প্রধান যোদ্ধা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর মাধ্যমে ইরান ইসরাইলকে ঘায়েল করতে চায়। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক দামেস্কে তথ্য প্রকাশ করেন যে, সিরিয়া হিজবুল্লাহর কাছে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ দেয়া শুরু করেছে। তাই বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় টিকে থাকুন এমনটা চায় ইরান। সিরিয়ার আরেক বন্ধু চীন। তারা চায় বাশার আল আসাদ সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। ২০১০ সালে সিরিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানিকারক দেশ ছিল চীন। ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য জেমসটাউন ফাউন্ডেশন ২০১০ সালের এক রিপোর্টে বলে যে, দামেস্কের বিষয়ে নতুন করে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বেইজিং। চীন বলেছেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী দেশগুলোর নাক গলানো ঠিক নয়। লিবিয়ায় যা হয়েছে তারা সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যে প্রস্তাব ভোটে দিয়েছিল তাতে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে চীন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তা তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জাতিসংঘের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কোন সামরিক পদক্ষেপ নিতে হলে দরকার নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন। কিন্তু সেই নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্যের দু’ সদস্য রাশিয়া ও চীন। তারা যেকোন প্রস্তাবে ভেটো বা বিপরীতে ভোট দিলে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.