গণমাধ্যম ও মানবাধিকার by ফরহাদ মজহার

আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে প্রথমে অপহরণ করা হয়েছিল, তার বাসার সামনে থেকে। আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ও গুমের যে রেকর্ড বর্তমান সরকারের রয়েছে তা বিবেচনা করে এই অপহরণকে দেশে ও বিদেশে মানবাধিকার কর্মীরা সহজভাবে নেয়নি। তার পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। সরকার তাকে হাজির করেছে বাধ্য হয়ে। কারণ তাকে অপহরণের খবর দেশে-বিদেশে বেশ দ্রুততার সঙ্গেই জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। উৎকণ্ঠা ও উদ্বিগ্নতা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। কেন তাকে কোনো আগাম অভিযোগ ছাড়া গ্রেফতার করা হল তার কোনো ব্যাখ্যা সরকার দিতে পারেনি। গ্রেফতারের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, আদিলুরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। প্রশ্ন উঠল, যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তাকে কেন ফৌজদারি কার্যপ্রণালীর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হল? সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হল না কেন? এর কোনো উত্তর সরকার পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। ফৌজদারি কার্যপ্রণালীর ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে তর্ক অনেক দিনের। পুলিশ এর অপব্যবহার করে। পুলিশের অপব্যবহার রোধ করার বিরুদ্ধে আগে আদালতে মামলাও হয়েছে। আদালত ৭ এপ্রিল ২০০৩ পরিষ্কার রায়ও দিয়েছে। ফৌজদারি পুলিশি ক্ষমতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫-এর সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ছয় মাসের মধ্যে এই বিধানগুলো এবং একই সঙ্গে পুলিশ অ্যাক্ট, পেনাল কোড এবং এভিডেন্স অ্যাক্ট ইত্যাদির সংস্কার বা পরিবর্তনেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ছয় মাস অনেক আগেই গত হয়েছে। ইতিমধ্যে জোট সরকার গত হয়েছে এবং এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারের পর ডিজিটাল সরকার ক্ষমতায় এসেছে। একজন মানবাধিকার কর্মীকে এই সরকারের আমলে অনায়াসে পুলিশ অপহরণ করল আগে, তারপর বলল ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর দেশ-বিদেশের চাপে বলা হল, পুলিশ সন্দেহ করছে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বিধান লংঘন করেছেন। এটা সন্দেহ। তার মানে তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এখনও এই লেখা যখন লিখছি তখন তোলা হয়নি। যা কিছু অভিযোগ সরকার বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমেই চাউর করছে। পুলিশ সন্দেহের জোরেই আদিলুরের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। আদালত ১০ দিন কমিয়ে ৫ দিন করেছে। কিন্তু উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাকে যা জিজ্ঞাসাবাদ করার কারাগার ফটকে করতে বলেছেন। এর আগে হাইকোর্টে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে নালিশ করবার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার থাকলে সেটা কারাগার ফটকে করতে হবে। থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযুক্তকে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে তথ্য আদায় করা যাবে না। আদিলুর কিছুটা রেহাই পেয়েছেন।
আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ হচ্ছে তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। ভুলটা কোথায়? সেটা সংখ্যায়। সরকার দাবি করছে, ৫ ও ৬ মে’র শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের তাড়িয়ে দিতে গিয়ে যে গুলিগোলা, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার হয়েছে তাতে একজনও হতাহত হয়নি। ‘অধিকার’ সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা সেদিন শহীদ হয়েছে, তাদের অনেকের তথ্য ‘অধিকার’ বিভিন্ন জেলায় জেলায় সরেজমিন গিয়ে অনুসন্ধান করে জানিয়েছে ৬১ জনের নাম-ঠিকানা তারা জোগাড় করতে পেরেছে। তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এটাই চূড়ান্ত নয়। এই তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি কোনো কানকথা বা শোনা কথার ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয়নি। এর সঠিকতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন এবং দলমত নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে ‘অধিকার’ সবসময় সতর্ক পদ্ধতি অবলম্বন করে। তথ্যের যাচাই-বাছাইও করা হয় অতিশয় সতর্কতার সঙ্গে। এই প্রথম ‘অধিকার’ কোনো মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করছে তা নয়। প্রতি মাসেই মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় এবং বছর শেষে বাৎসরিক প্রতিবেদনও ‘অধিকার’ প্রকাশ করে আসছে। এ সংগঠনটির কৃতিত্ব, সাফল্য এবং বিপুল গ্রহণযোগ্যতা সঠিক তথ্য হাজির করার নৈতিক দৃঢ়তার মধ্যে নিহিত। অতি অল্প সময়ের মধ্যে মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে ‘অধিকার’-এর আন্তর্জাতিক খ্যাতি তথ্যের সঠিকতার জন্যই। এতদিন ‘অধিকার’ কোনো ভুল তথ্য দিল না, শুধু মে মাসের হত্যাযজ্ঞের মৃতের সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য দেবে, এটা অবিশ্বাস্যই মনে হয়। কিন্তু তারপরও দেখছি মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামের গোড়ার প্রশ্ন বাদ দিয়ে ৫ ও ৬ তারিখে শহীদের সংখ্যা নিয়ে তর্কটাকেই নানাভাবে প্রধান করে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে অতিশয় নিম্ন পর্যায়ের দলবাজিতা এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানসিক ও নৈতিক অবক্ষয়ই এর কারণ, এটা স্পষ্ট। এটাও লক্ষ্য করছি, যারা একজন মানবাধিকার কর্মীকে এভাবে হেনস্থা ও পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা করছেন, তারাও শহীদের সংখ্যা নিয়ে বেশ কাতর। তারা বলছেন, সংখ্যা এত হবে না। পঞ্চাশ-টঞ্চাশ বা কাছাকাছি কিছু হতে পারে। সরকারের অভিযোগ সঠিক হলেও, তারা বলছেন, আদিলুর রহমান খানকে এভাবে গ্রেফতার করা ঠিক হয়নি। এর জন্য আওয়ামী লীগের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। বেশ কৌতুককরই মনে হল। একজন মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কাজটা খারাপই হয়েছে। এ সত্য ও বাস্তবতা তারা অস্বীকার করতে পারছেন না। কিন্তু তাদের আশংকা, এর সুযোগ নিতে পারে বিএনপি। তারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই অন্যায় গ্রেফতারের ইস্যু কাজে লাগাতে পারে। যারা এভাবে দেখছেন, বোঝা যায় তারা আওয়ামীপন্থী এবং ঘোর বিএনপিবিরোধী। তদুপরি যে কোনোভাবে ইসলামপন্থীদের বিরোধিতা করা তারা তাদের ধর্মজ্ঞান করেন। তবে সেটা একটা ভদ্রলোকি বা সুশীল মতাদর্শের মোড়কে ঢেকে রাখেন। কিন্তু মোড়ক ফেটে ভেতরটা বেরিয়ে আসে। তারপরও বলব, এটা মন্দের ভালো। বিশেষত যদি মনে রাখি যে প্রধানমন্ত্রীর লাল রঙ মেখে শুয়ে থাকা ও পুলিশের গুতা খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনীটা বিশ্বাস করে এমন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়। চেতনা ও বিবেক নিম্ন শ্রেণীর দলবাজিতা ও ক্ষমতার কাছে বন্ধক দেয়া নতুন কিছু নয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে লন্ডনে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি কামাল আহমেদের লেখা, ‘বিচারের আগে দোষী একজন আদিলুর’ (১৬ অগাস্ট ২০১৩) পড়ে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি। কামাল আহমেদ বছরওয়ারি অধিকারের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছেন। তার লেখায় স্পষ্ট যে, মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে অধিকার কোনো দলীয় বা রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করে না। প্রতিটি সরকারের অধীনেই মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং অধিকার তা যথাসাধ্য সঠিকভাবে পেশ করার চেষ্টা করেছে। এমনকি আদিলুর যখন জোট সরকারের আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন, তখন জোট সরকারের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ও তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করেছে ‘অধিকার’। কামাল আহমেদের লেখার গুরুত্ব হচ্ছে তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের বর্ণনায় একজন মানবাধিকাররক্ষীকে (হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার) আদালতের বিচারের আগেই দোষী সাব্যস্ত করায় একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত এবং আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ তিনি যে গণমাধ্যমগুলো সম্পর্কে ইঙ্গিত করছেন, তাদের নাম নেয়ার কোনো দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশের সচেতন পাঠকদের কাছে তারা পরিচিত।
এটা অস্বীকার করার জো নাই যে, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা ন্যক্কারজনক। অথচ মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা শক্তিশালী না হলে শুধু মানবাধিকার সংস্থার সাহসী ভূমিকা দিয়ে নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা অসম্ভব। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের লেখা পড়ছিলাম। তার লেখার শিরোনাম হচ্ছে 'Something that should seriously worry the PM' (প্রধানমন্ত্রীর কিছু গুরুতর বিষয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত’, দেখুন, ১৬ অগাস্ট ২০১৬)। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন আদিলুর রহমান খানের পক্ষে দাঁড়াল, মাহফুজ আনাম যেন তার জন্যই কাতর হয়ে পড়েছেন। এর ফলে সরকার ও রাষ্ট্রের বদনাম হয়েছে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এ এক বিব্রতকর পরিস্থিতি। বলেছেন, এটা বাংলাদেশের প্রাপ্য নয় (Bangladesh does not deserve) । কিন্তু জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা কানাডা কেউই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি, বরং শেখ হাসিনার অত্যাচার, নির্যাতন ও দমননীতির বিরোধিতা করছে। একজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করা মারাত্মক ঘটনা, মাহফুজ যা মেনে নিতে পারছেন না। হিউমেন রাইটস ওয়াচের ব্রাড এডাম বলেছেন, এটা অনেকটা মেরুদণ্ডে হিমপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার, এতই ভীতিকর। বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং সাধারণভাবে নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্ন কী পরিমাণ নাজুক হয়ে পড়েছে তার কোনো স্বীকৃতি মাহফুজ আনামের লেখায় পেলাম না। তিনি সরকারের মতোই বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে সেই কথাই বলেছেন। তার লেখায় সরকারের প্রতি পক্ষপাত স্পষ্ট।
৫ ও ৬ তারিখে হেফাজতের সমাবেশ ও হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্রে ডেইলি স্টারের ভূমিকা ছিল সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে একান্তই সরকারের পক্ষে সাফাই ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ ছাপানো ও প্রচার। মাহফুজ দাবি করেছেন, তারা সতর্কভাবে সেদিন কতজন মারা গিয়েছে তা নিরীক্ষণ করেছেন এবং তিনি ‘অধিকার’-এর সংখ্যার সঙ্গে একমত নন। সেটা হতেই পারে। তাহলে কতজন সেদিন মারা গিয়েছে সেই সংখ্যা উল্লেখ করলে বোঝা যেত তার আপত্তি ঠিক কোথায়। কিন্তু তার লেখায় কোনো সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি, তার পত্রিকার সতর্ক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সেদিন কয়জন মারা গিয়েছিল। যেটা বিস্ময়কর সেটা হল মাহফুজ আনাম বলতে চাইছেন, আদিলুর রহমানের সমস্যা হচ্ছে অধিকারের রিপোর্ট ও আদিলুর রহমান খানকে সরকারের হ্যান্ডলিংয়ের সমস্যা। কী রকম? সেই হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে সরকারের অযোগ্যতা বা চরম অক্ষমতাই প্রকাশিত হয়েছে (The handling of the Odhikar report and the subsequent arrest of its secretary Adilur Rahman, are examples of incompetence at their devastating worst that has today brought the government to disrepute and the country to worldwide embarrassment.) ফলে কিভাবে জাতিসংঘ ও বিদেশীদের না খেপিয়ে আদিলুরকে শায়েস্তা করা যেত তিনি তার একটা ফিরিস্তি দিয়েছেন বা পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। গণবিরোধী ও মানবাধিকার বিরোধী একটি সরকার কিভাবে একজন মানবাধিকার কর্মীকে শায়েস্তা করবে, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তার লেখায় সেই পরামর্শ দিয়েছেন। এই হচ্ছে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একটি প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকের অবস্থান।
মাহফুজ আনামের এই রাজনীতির আমি বিরোধিতা করি। সামাজিক ক্ষেত্রে তাকে বন্ধু গণ্য করি বলে এই রাজনীতির বিপদ সম্পর্কে তাকে সতর্ক করার জন্যই কথাগুলো তুলেছি। বাংলাদেশ দলীয় ও রাজনৈতিক-মতাদর্শিকভাবে একটি বিভক্ত দেশ। এ ক্ষেত্রে যদি আমরা উদারনৈতিক মূল্যবোধেও বিশ্বাস করি তাহলে মানবাধিকারের ন্যূনতম নীতিগত ক্ষেত্রগুলো যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। সেটা ইনক্লুসিভ বা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে হতে হবে, এক্সক্লুসিভ নয়, অর্থাৎ ইসলামপন্থীদের মানবাধিকার থাকবে না, কেবল আওয়ামী লীগ ও সেকুলারদের থাকবে, তা হবে না। যদি তা করি তাহলে সমাজকে আমরা আরও গভীর বিভাজনের দিকে ঠেলে দেব। যার ফল হবে মারাত্মক। যদি ইসলামপন্থাকে উদারনৈতিক রাজনীতি দেশের জন্য মঙ্গলজনক মনে না করে, তবে তার বিরুদ্ধে মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম চালাক। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তাদের ওপর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চলতে পারে না। তারপর কয়জন নিহত হয়েছে মৃত মানুষগুলো নিয়ে সংখ্যার রাজনীতি খুবই ন্যক্কারজনক ব্যাপার। যে কোনো নাগরিক, তার ধর্ম বা মতাদর্শ যাই হোক, রাষ্ট্র ও সরকার তার নাগরিক ও মানবিক অধিকার লংঘন করতে পারে না। বাংলাদেশকে যদি এই জায়গায় আমরা নিতে না পারি, তাহলে সেটা মস্ত বড় বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেবে।
‘অধিকার’ সরকারকে তথ্য দেবে না কখনোই বলেনি। সুস্পষ্টভাবে যাদের কাছ থেকে ‘অধিকার’ তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। আর যেখানে খোদ সরকার মানবাধিকার লংঘন ও গণহত্যার দায়ে মানবাধিকার কর্মীদের কাছে অভিযুক্ত সেক্ষেত্রে স্বাধীন একটি তদন্ত কমিশন গঠিত না হলে সরকারকে তথ্য দিতে বলার অর্থ মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।
যেখানে অধিকারের সম্পাদক তার নিজেদের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারেননি, সেখানে যারা ৫ ও ৬ তারিখে হত্যার সাক্ষী হয়েছে বা তথ্য দিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? কামাল আহমেদ গণমাধ্যমের ভূমিকায় যথার্থই লজ্জিত ও দুঃখিত হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.