অচেনা পথে হাসিনা

কোন পথে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নতুন পথ কিছুটা চেনা, বেশিরভাগই অচেনা। অনেকে ২০০৬ সালের শেষ দিককার সঙ্গে বর্তমান সময়ের দৃশ্যপট মেলানোর চেষ্টা করছেন।
এটা ঠিক কিছু দৃশ্যে হয়তো মিল আছে, কিন্তু বেশিরভাগ দৃশ্যেই কোনই মিল নেই। সেইসময় মানুষ জানতেন না কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। কিন্তু সবাই জানতেন ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। কিন্তু এখন আসলে কেউই জানেন না ক্ষমতা আদৌ হস্তান্তর হবে কি না?
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলটিতে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের কোন প্রস্তুতিই শুরু হয়নি। নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির কোন কাজও শুরু হয়নি। মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির প্রধান এইচএম এরশাদ পরিস্কার করেই বলেছেন, তিনি কোন নির্বাচন দেখছেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মতও একই। তাহলে কোন পথে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক? সংবিধানে যাই লেখা থাকুক না কেন গণতান্ত্রিক দেশে নির্ধারিত সময় অন্তে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন না হলে কি হবে সে প্রশ্নও জ্বলন্ত। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তি মনে করেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোন ধরণের কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষমতা বিএনপির নেই। রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি হিসেবে জামায়াত-শিবিরকেই বিবেচনা করছেন তারা। আর এ কারণেই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে অনেকগুলো বিষয়েই ধোয়াশা এখনও কাটছে না। সংসদ কবে ভাঙ্গবে তা এখনও পরিস্কার নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদিও অক্টবরের মধ্যে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলেছিলেন, এখন আর এ ধরনের সম্ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না। তাছাড়া, সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন বর্তমান সংবিধানে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার কোন ধরনের ব্যবস্থা নেই। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হলে সংবিধানে সংশোধন আনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে সেনা বাহিনীর ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মনিরুজ্জামান।
তবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সাম্প্রতিক বক্তব্যের মধ্যে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবউল্লাহ এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, জানিনা তারা প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় অব্যহত রাখার ক্ষেত্রে কোন কৌশল তৈরি করেছেন। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকলে তা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক পরিণতি আনবে। মেয়াদ শেষ করার পর পদে বহাল থাকলে তার বৈধতা এবং নৈতিক অবস্থান নিয়ে নাগরিকদের মাঝে বড় প্রশ্ন উঠবে। এটা হবে গায়ের জোরে থাকা। কিন্তু ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখি এভাবে গায়ের জোরে বেশি দিন থাকা যায় না। বাংলাদেশের পশ্চিমা দেশের মতো ভাল গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলেও অন্তত ভোটের চর্চা চলছে অনেক বছর ধরেই। ১৯৩৫ সালে গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্টের পর থেকেই এদেশের মানুষ ভোটের চর্চা করে আসছে। সুতরাং ভোটের সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করলে তা বেশি দিন টিকবে না। তার চেয়ে বরং নির্বাচনকালীণ সরকারের ব্যাপারে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান দিলে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আগ্রহ আবার ফেরার সম্ভাবনা আছে বলে তিনি মত দেন। অহেতুক রক্তক্ষয়, লোকক্ষয়, উদ্বেগ, উত্তেজনা সৃষ্টি না করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে আসার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংবিধান পাথরে খোদাই করা কোন জিনিস নয়। দেশ ও জনগনের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ আছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। যদিও কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে কিন্তু জনগন স্বাধীন হননি- যে কারণে এত সংকট। সংকট সমাধানের রাজনীতিবিদদের প্রতি ঐক্যমতে পৌঁছার আহবান জানিয়ে গতকালই সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, না হয় পরিণতি কারও জন্যই শুভ হবে না।

No comments

Powered by Blogger.