মিসরে আবার ব্রাদারহুড!

কায়রোয় সেনাবাহিনীর অভিযানের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট
মোহাম্মদ মুরসির এক সমর্থক দুই হাত তুলে সংবাদকর্মীদের
কার্তুজ দেখাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, সেনাবাহিনী নির্বিচারে
গুলি করে ৪২ সমর্থককে হত্যা করেছে ষ রয়টার্স
মিসরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর রাজপথে অবস্থান নিয়েছে মুরসির সমর্থক ও বিরোধীরা। দুই পক্ষে চলছে ব্যাপক সংঘাত। গত কয়েক দিনে নিহত হয়েছে অন্তত ৮০ জন। এ অবস্থায় মিসর কোন পথে এগোচ্ছে, তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। সেনাবাহিনী মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর তিনিসহ তাঁর কয়েকজন শীর্ষ উপদেষ্টাকে আটক করে। তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং স্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁদের জন্য এটা চরম অবমাননাকর। মুরসি মোটেও জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। রাজনৈতিক ক্যারিশমা বলতে যা বোঝায়, তার ছিটেফোঁটাও তাঁর মধ্যে ছিল না। দেশের অন্যতম সমস্যা দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের সমাধানে তিনি কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি। দীর্ঘ তিন দশকের স্বৈরশাসনের পর মিসরে গণতন্ত্র এসেছিল এবং তা মানুষের প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। কোনো প্রেসিডেন্টের পক্ষে এ প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। আর মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মুরসির মধ্যেও এমন কোনো বাড়তি গুণ ছিল না, যা দিয়ে তিনি মানুষের ওই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করতে পারতেন। এর পরও একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এমনভাবে সরিয়ে দেওয়াটা ভালোভাবে নেয়নি মিসরের জনগণের একটা বড় অংশ। তাই বলে এ জন্য তারা যে খুব ক্ষুব্ধ, তা নয়। তারা এটাকে সোজা কথায় ‘সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান’ হিসেবে ধরে নিয়েছে। তবে এ ‘অভ্যুত্থানের’ বিরুদ্ধে তারা কথা বলছে একটু নরম সুরে। মুরসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিসরের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার রাতে সেনাবাহিনী তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েদেয়। মুরসিকে অপসারণকারী সেনাবাহিনীকে যারা সমর্থন করছে, তারা নিজেদের ভাবছে জাতীয় চেতনার জিম্মাদার। তাদের ভাবটা এমন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে অসাংবিধানিক কিছু করার অধিকারও তারা রাখে। তাদের দাবি, দেশের মানুষ যা চাইছে, তারা শুধু সেটাই করছে। এ অবস্থায় মিসরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভয়ংকর প্রশ্ন হলো নতুন করে নির্বাচন হলে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থীই কি আবার বিজয়ী হবেন? এর জবাব হলো সেটা এখন প্রায় অসম্ভব। কারণ, মুরসির অদক্ষ শাসনের সময়ই ব্রাদারহুড জনপ্রিয়তা খুইয়েছে। এর পরও মনে রাখতে হবে, মুসলিম ব্রাদারহুডই দেশের সবচেয়ে সংগঠিত শক্তি। আর এখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ তাতে ক্ষুব্ধ হতে পারে এবং এতে করে ব্রাদারহুডই লাভবান হতে পারে। আর সাধারণ মানুষের এ ক্ষোভ আবার তাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারে। মুরসির সমর্থকেরা মনে করে, সেনাবাহিনী তাঁকে সরিয়ে দেওয়ায় পশ্চিমারা খুশি হয়েছে। যদিও তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পশ্চিমাদের কোনো অস্বাচ্ছন্দ্য ছিল না। ওয়াশিংটন, লন্ডন আর প্যারিস এখন সম্ভবত মিসরে এমন একজন নতুন নেতার অপেক্ষায় আছে, যার সঙ্গে কাজ করা আরও সহজ হবে। বিশেষ করে সিরিয়া সংকটের মতো বিষয়ে তাঁকে পাশে পাওয়া যাবে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে কতটা দ্রুততার সঙ্গে মিসর নতুন নির্বাচনের দিকে এগোবে এবং সেই নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী সেই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে কি না তার ওপর। কেননা, ক্ষমতার অদলবদলে প্রভাব রাখার পেছনে মিসরের সেনাবাহিনীর ব্যাপক অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.