উত্তরায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২

রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও রোডে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই যুবক নিহত হয়েছেন। র‌্যাব দাবি করেছে, নিহত ওই দুই যুবক জহিরুল ইসলাম ও সাজু আকন্দ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য।র‌্যাব-১ গতকাল বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, র‌্যাব-১-এর একটি দল মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উত্তরার মাসকট প্লাজার কাছে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এ সময় র‌্যাবের সদস্যদের থামার সংকেত অমান্য করে একটি প্রাইভেট কার ১১ নম্বর সেক্টরের দিকে যেতে থাকে। র‌্যাবের সদস্যরা ধাওয়া করলে তাঁদের লক্ষ্য করে ওই গাড়ি থেকে গুলি ছোড়া হয়। র‌্যাব পাল্টা গুলি করলে উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ বাধে। একপর্যায়ে গাড়িটি ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও রোডে থেমে যায়। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দলের দুই সদস্য পালিয়ে যান। পরে র‌্যাবের সদস্যরা গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-গ ১১-৪৮৬৮) তল্লাশি চালিয়ে আসনে বসা একজনকে এবং রাস্তায় আরেকজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ওই দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, র‌্যাবের সদস্যরা ওই গাড়ি থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি গুলি, গুলির ছয়টি খোসা, দুটি চাপাতি, দুটি ছুরি, একটি হাতুড়ি ও হত্যায় ব্যবহূত ইস্পাতের জিআই তার পান। উদ্ধার হওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স অনুযায়ী, গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তির নাম জহিরুল ইসলাম ও সাজু আকন্দ বলে জানা যায়। তাঁদের দেহ তল্লাশি করে একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়।হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই দুজনের লাশ শনাক্ত করতে গতকাল রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত কেউ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে যায়নি।র‌্যাব-১-এর অপস কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, ১৩ মে হোটেল র‌্যাডিসনের কর্মী আলেয়া ফেরদৌসী কাওলার বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন এবং ওই দিন গাজীপুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আলেয়ার স্বজনদের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একটি ছিনতাইকারী চক্রের সন্ধান পায় র‌্যাব। ভোরে উত্তরায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ক্রেডিট কার্ডটি আলেয়া ফেরদৌসীর। এই সংঘবদ্ধ চক্র তাঁর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ১৩ মে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের টঙ্গীর একটি এটিএম বুথ থেকে এবং ১৪ মে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলে। এটিএম বুথের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ছবির ব্যক্তি ও নিহত জহিরুলের চেহারা হুবহু। জহিরুলের বাবার নাম আবদুস ছালাম, গ্রামের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরের পূর্ব বলিয়াদহে। নিহত সাজু আকন্দ রাজধানীর ৫৫১ পূর্ব বাড্ডার সিকান্দারবাগে থাকতেন। তাঁর বাবার নাম সামসুল আকন্দ। ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রের সদস্যরা আলেয়াকে হত্যা করেছে।
টঙ্গী প্রতিনিধি জানান, ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাস্থলের পাশের একজন দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, র‌্যাবের সদস্যরা একটি গাড়ির পেছনের ডান চাকায় গুলি করে সেটি থামান। ভয়ে তিনি সেখান থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। এরপর তিনি ৩০-৪০টি গুলির শব্দ শোনেন।
পাশের বস্তির আবদুল মালেক ও মানসুরা বেগম বলেন, ফজরের নামাজের আগে তাঁরা তিনটি এবং নামাজের পর ৩০-৩৫টি গুলির শব্দ শোনেন। ভোরে তাঁরা দুই ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ওই দুজনকে তাঁরা আগে কখনো ওই এলাকায় দেখেননি।

No comments

Powered by Blogger.