অভিযোগপত্র জমার সাত মাস পার হলেও বিচার শুরু হয়নি

কুকুর লেলিয়ে ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রী মজুমদার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার সাত মাস পার হলেও বিচারকাজ শুরু হয়নি। গ্রেপ্তার হয়নি মামলাটির গুরুত্বপূর্ণ দুই আসামি। আদালতে দেওয়া হয়নি পুলিশ প্রতিবেদনও।মামলার ধীরগতি ও নানা সংস্থার অসহযোগিতায় হতাশ ও অসহায় হয়ে পড়েছে হিমাদ্রীর পরিবার। হিমাদ্রীর মা গোপা মজুমদার গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? মাঝেমধ্যে মনে হয় এই দেশ আমাদের না। এই দেশ টাকাওয়ালা আর ক্ষমতাবানদের।’গত বছর ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশের একটি ভবনের পাঁচতলার ছাদে হিমাদ্রীকে মারধরের পর তার দিকে জার্মানির হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামারফিল্ডের এই ছাত্রকে পরে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এর পর ২৩ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে সে মারা যায়।
ধীরগতিতে চলছে মামলা: গত বছর ২৮ এপ্রিল হিমাদ্রীর বাবা পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করেন। একই থানায় হত্যা মামলা করেন হিমাদ্রীর মামা অসিত দে। মামলায় জুনায়েদ আহমেদ ওরফে রিয়াদ ও তাঁর বাবা শাহ সেলিম টিপু এবং জুনায়েদের তিন বন্ধু শাহদাত হোসেন ওরফে সাজু, মাহবুব আলী ওরফে ডেনি ও শাওনকে আসামি করা হয়। প্রথম তিন আসামি বর্তমানে হাইকোর্টের জামিনে রয়েছেন। গত ১ অক্টোবর আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।আদালত সূত্র জানায়, পুলিশ দুই আসামি মাহবুব আলী ও শাওনকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে তা লিখিতভাবে নিম্ন আদালতকে জানালে আদালত পরবর্তী কার্যক্রম নিতে পারবেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো তা জানানো হয়নি।বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ফেরদৌস আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। আদালত পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে মালামাল ক্রোক এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেবেন। এর পর মামলা জজ আদালতে শুনানিতে যাবে।’পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, দুই আসামি মাহবুব আলী ও শাওনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আদালতে এখনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।জানতে চাইলে মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘এটি আলোচিত মামলা। আমরা নিয়মিত এই মামলাটি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করে আসছি। পলাতক দুই আসামিকে ধরার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় এখনো নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।’
আর গান শোনায় না: গতকাল হিমাদ্রীদের হেমসেন লেনের বাসায় গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের মাঝে বিষণ্নতা। বসার ঘরে হিমাদ্রীর বিশাল একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি। তাঁর মা গোপা পুত্রশোকে অঝোরে কাঁদেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলেছে। কিন্তু আমাকে প্রতিদিনই মারছে আমার হিমু (হিমাদ্রী)। কোনো ভালো খাবার রান্না করি না। কারণ, সে খাবারের পাগল ছিল।’ হিমাদ্রীর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ভাই ‘ও’ লেভেলের ছাত্র নীলাদ্রী পড়ছে। সে জানাল, ‘দাদার গিটার আমাকে কাঁদায়। সে গিটারে নতুন গান তুলে আমাকে বসিয়ে শোনাত। এখন আর গান শোনায় না।’
হিমাদ্রীর বাবা প্রবীর বলেন, ‘সবকিছু বড়লোকের ব্যাপার। কেউ একজন ভালো করে সহযোগিতা করে না। এগিয়ে আসে না। শুধু টাকা আর টাকা। আমরা হতাশ। জানি না, এভাবে আর কত দিন পারব।’ বড় ছেলের এমন পরিণতি দেখে এখন ছোটটিকে নিয়েও নানা ভয় ও আশঙ্কা তাঁদের মনজুড়ে।

No comments

Powered by Blogger.