উত্তম বড়ুয়া এখনো নিখোঁজ পরিবার বিপদে

রামুর বৌদ্ধপল্লিতে হামলার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন উত্তম কুমার বড়ুয়া। আট মাসেও পুলিশ তাঁকে খুঁজে পায়নি। এলাকায় প্রচার রয়েছে, উত্তম বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাবুল আকতার বলেন, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বৌদ্ধপল্লিতে হামলার পরপরই উত্তম আত্মগোপন করেন। বান্দরবানে অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযানও চালান। এখন শোনা যাচ্ছে, তিনি বিদেশে চলে গেছেন। উত্তমকে পাওয়া গেলে রামুর ঘটনার অজানা কাহিনি হয়তো জানা যেত।
রামুর হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত সরকারি কমিটি গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ২০৫ জনের বিরুদ্ধে যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল, তাতে উত্তম বড়ুয়াকে এক নম্বর অভিযুক্ত দেখানো হয়। যদিও তদন্ত কমিটি উত্তমের সাক্ষ্য নিতে পারেনি।
উত্তমের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাঁর ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার ছবি দেখা গেছে। তখন শোনা যায় যে, কেউ একজন ওই ছবিটি তাঁর ফেসবুকে সংযুক্ত (ট্যাগ) করেছিল।
উত্তম বড়ুয়া রামু সদরের চেরাংঘাটা গ্রামের সুদত্ত বড়ুয়ার ছেলে। তিনি রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক। স্ত্রী রিতা বড়ুয়া ও একমাত্র ছেলে আদিত্য বড়ুয়াকে (৪) নিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের সামনে মেরংলোয়া গ্রামের হূদয় রঞ্জন দাশের ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গতকাল বুধবার সকাল নয়টায় সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজখবর করার পর উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়।
উত্তমের খবর জানতে চাইলে রিতা বলেন, ‘ঘটনার দিন (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত আটটায় সে যে পালিয়ে গেল, এখন পর্যন্ত কোনো খবর নেই। কেউ বলছেন, থাইল্যান্ড গেছে, কেউ বলেন মিয়ানমার। কিন্তু সে বেঁচে আছে কি না, তা-ও জানতে পারছি না। তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলেটা বাবার জন্য প্রায় সময় কান্নাকাটি করে।’
রিতা আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে উত্তম বড়ুয়ার ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছিল। তখন ছেলেটাকে নিয়ে কোনোমতে বাবার বাড়িতে (বড়ুয়া পাড়ায়) আশ্রয় নেই। রাত নয়টার দিকে লোকজন উত্তমের খোঁজে সেখানে হইচই শুরু করে। একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আশপাশের আরও ১০টি বসতবাড়ি ও দোকান পুড়ে ছাই হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে কোলের শিশু নিয়ে পালাতে থাকি। সারা রাত ছেলেকে নিয়ে বাইপাস সড়কের আমতলি নামক স্থানে ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকি। মশার কামড়ে ছেলে কান্নাকাটি করলে মুখ চেপে ধরি। পরদিন ভোরে সেখান থেকে বাসে চরে যাই ৫০ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া। সেখান থেকে বাসে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় এলাকায়। এক ঘরে গৃহপরিচারিকা হিসেবে আশ্রয় নেই। পরিচয় গোপন করে ওই ঘরে দেড় মাস রান্নাবান্নার কাজ করেছি।’ রিতা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার স্বামী অন্যায় করে থাকলে তার খেসারত আমাকে দিতে হবে কেন? আমার ছোট্ট ছেলেটা কী অপরাধ করেছে? তাকেও কেন পালিয়ে থাকতে হচ্ছে?

No comments

Powered by Blogger.