সুশীলরা কই? by কাফি কামাল

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। এককালের ছাত্রনেতা। এখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাতে কি। রক্ত মাংসের মানুষ তো। তাই চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ছাত্রলীগের ওপর এলাকাবাসীর হামলার ঘটনা তার মনকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে।
সে রক্তক্ষরণ তিনি লুকিয়ে রাখেননি। প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। ফটিকছড়ির নির্মম ঘটনায় সুশীল সমাজের নীরবতা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। এ নিয়ে রাগারাগিও করেছেন প্রকাশ্যেই। এমন কি শাহবাগে পুলিশ প্রহরায় আন্দোলনরত প্রতিবাদীদের নিয়েও। ফটিকছড়ির ঘটনা তার হৃদয়কে এতটাই বিক্ষত করেছে যে তিনি নববর্ষে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ১২ই এপ্রিল থেকে প্রতিদিনই তার স্ট্যাস্টাসে ঘুরে ফিরে আসছে ফটিকছড়ি। ১২ই এপ্রিল ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- ‘.......সুশীলরা কই? ছাত্রলীগ মারা যায়। আমার ভাইগুলো মারা যায়। আমার মায়েরা কাঁদে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এই..... মাখন খায়। সরকারি চাকরিতে থাকলে ভাল ভাল পোস্টিং নেয় আবার ছাত্রলীগরে গালি দেয়। ইচ্ছে করছে এই......পয়দাগুলোকে...’। ১৩ই এপ্রিল অন্য একটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- ‘হা হা হা হা হা........আমার ছাত্রলীগের বাচ্চাগুলো লাশ হয়ে মায়ের কোলে ফিরে আসবে। শাহবাগ পুলিশি পাহারায় গান গাইবে। চৈত্র-সংক্রান্তি উদযাপন করবে। ওদের কেউ কেউ টেলিভিশনে চাপাবাজি করে পর্দা ফাটিয়ে ফেলবে। আমি এই ধান্ধার মধ্যে নাই। প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেবো কিন্তু প্রতিশোধ নেবো। শাহবাগের বয়ান আর গান শোনার টাইম নাই।’ নববর্ষের দিন এক স্ট্যাটাসে শাকিল লিখেছেন- ‘আমি দুঃখিত। কাউকে শুভ নববর্ষ বলতে পারছি না। আমার সন্তানসম ছাত্রলীগের কর্মীদের লাশ ভেসেছিল ফটিকছড়ির জলে। ওদের দাফন হয়েছে। ওদের মা’রা এখন কাঁদছে। আমার সন্তান বুয়েটের দীপ এখনো লড়াই করছে মৃত্যুর সঙ্গে। আমার মেয়ে নাসরিন সুলতানা ঝরার ভাই ঢাকা মেডিকেলে। আপনারা যারা চৈত্র-সংক্রান্তি উদযাপন করছেন গান গেয়ে তারা গেয়ে যান। আপনাদের গান গাওয়ার অধিকার রক্ষা করতে আমরাই জীবন দেবো।’

১৫ই এপ্রিল লিখেছেন- ‘আবার দিচ্ছি...। আজ ছয়দিন। আরিফ রায়হান দীপ এখনো সংজ্ঞাহীন, স্কয়ারের আইসিইউতে। কথা হলো তার সহোদর রিয়াজের সাথে। ডাক্তাররা এখনো জানেন না সে আবার সংজ্ঞা ফিরে পাবে কিনা। আমার অনেক বন্ধুই ফটিকছড়িতে ঘটে যাওয়া পাশবিকতার ভিডিও চিত্র দেখেছেন। আমি দেখতে পারিনি। হয়তো রাজনীতি করি বলে, অথবা দৈহিক গড়ন বা উঁচু গলায় কথা বলার কারণে অনেকেই আমাকে ‘শক্ত মানুষ’ বলে মনে করেন। না, এই নৃশংসতার চিত্র দেখার মতো শক্ত আমি এখনো হয়ে উঠতে পারিনি। সবুজ-শ্যামল এই ব-দ্বীপের পলিমাটির স্তরে স্তরে ভাইয়ের-মায়ের-বোনের স্নেহ। এই সমতটে শান্তির ধর্ম ইসলাম এসেছিল পীর-ফকির-অলি আউলিয়ার হাত ধরে। এই জনগোষ্ঠির মরমিয়া বেদনার সঙ্গী হয়ে। এখনো হযরত শাহ জালাল (রঃ), হজরত শাহ পরাণ (রঃ), হজরত শাহ আমানত (রঃ), হজরত শাহ মখদুম (রঃ) আর হজরত শাহ সুলতান (রঃ) এর মাজার শরীফে শিরনি মানেন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই। মনে পড়ে, ছোটবেলায় পড়তাম খ্রীষ্টান মিশনারিদের পরিচালিত ময়মনসিংহ হলি ফ্যামিলি স্কুলে। কখনও অসুস্থ হয়ে স্কুলে যেতে না পারলে অস্ট্রেলিয়ান সিষ্টার গে¬ারী বা সিষ্টার হেলেন উৎকন্ঠিত হয়ে চলে আসতেন বাসায়। মায়ের মমতায় স্পর্শ করতেন অসুস্থ বালককে। ক্লাশ সিক্সে যখন মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে তখন একবার দোতলার সিঁড়ি থেকে পড়ে মাথা ফেটে গিয়েছিল। ছোট্ট পাখীর বাচ্চার মতো আমাকে পরম আদরে হাসপাতালে নিযে গিয়েছিলেন প্রাণেশ বাবু স্যার। তার সাদা রুমাল রক্তে ভরে গিয়েছিল। ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে নুর মোহাম্মদ স্যার টিফিন পিরিয়ডে আমাদের নিয়ে নামাজ পড়তে যেতেন। দরদি কন্ঠে কোরান তেলাওয়াত করতেন। ভুলি নাই। রাঙ্গামাটির একদম প্রত্যন্ত গাঁয়ে বেড়াতে গেলে আমার মার্মা বন্ধু মংলার মাঈই (মা) যখন ওর বিরুদ্ধে আমার কাছে নালিশের ঝাঁপি খুলে বসেন তখন মনে হয় ঢাকা শহরে মংলার দায়িত্ব বোধকরি শুধুই আমার। ইদানিং প্রতিটি সকাল নিয়ে আসে দুঃসহ যন্ত্রনা। প্রতিটি রাত দুঃস্বপ্নময়। ভাবি, ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে?’ পরক্ষণেই মনে পড়ে পবিত্র কোরানের সেই অমোঘ বাণী, ‘নিরাশ হইয়োনা যদি মুমিন হও।’

‘দুই দল সমঝোতার জন্য প্রস্তুত নয়’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুই দলের মধ্যে অনমনীয়তা রয়েই গেছে। সমঝোতার জন্য তারা প্রস্তুত নয়। অথচ জাতীয় স্বার্থে বড় দলগুলোর সমঝোতায় পৌঁছার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। মানবজমিন অনলাইনকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমাদের (টিআইবির) প্রস্তাবের পর সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি না হলেও গণমাধ্যমে সরকারের পক্ষে বেশ কয়েকজনের কিছু প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আসলে সংকট উত্তরণের জন্য আলোচনার সুবিধার্থে সমঝোতার কতগুলো ‘উপাদান’ আমরা দিয়েছি। এতে ইতিবাচক উপাদান আছে বলে সরকার ও বিরোধী দলের অনেকেই মত দিয়েছেন ইতিমধ্যে। তবে দুই দলের কারও ছাড় দেয়ার মানসিকতা এখনও দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। বড় দুই দলের মাঝে ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতায় আসার যে প্রতিযোগিতা চলছে তারই ফল এটা। ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনা এক বছর পার করেছে। আরও অনেকে গুম হয়েছে। গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা চলছেই। সরকারের ওয়াদা ছিল বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা। কিন্তু তা হয়নি। এর ফলে বিরোধী দল বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু এর কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে ক্ষমতার রাজনীতি। এর উত্তরণের জন্য সমঝোতার উপায় হিসাবে নির্বাচনের কাঠামো পুনর্গঠন করা জরুরি। এছাড়া বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগসহ সাংবিধানিক ব্যবস্থাগুলো রাজনীতির বাইরে রাখা জরুরি। এটা বেশ কঠিন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে দুই দলই এই সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে আসছে। ফলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে পূর্বশর্ত তা পূরণ হয়নি। আমাদের নতুন প্রজন্ম দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের চোখের সামনে সংঘাত দেখতে দেখতে বড় হচ্ছে। এটা প্রত্যাশিত নয়। এ অবস্থার নিরসনের জন্য বড় রাজনৈতিক দলকেই এগিয়ে আসতে হবে সমঝোতার জন্য।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: জাকারিয়া পলাশ

No comments

Powered by Blogger.