বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলা, নিহত ৩, আহত ১৩২

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় বোমা হামলার ঘটনায় ৮ বছরের একটি শিশুসহ তিন জন মারা গেছেন। আহত ৮ শিশুসহ ১৩২ জন। সোমবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে বোস্টন ম্যারাথনের ফিনিশিং লাইনের কাছাকাছি স্থানে বিকট শব্দে পরপর দু’টি বিস্ফোরণ ঘটে।
এসময় পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকেন হতাহতরা।
২৭ হাজার দৌড়বিদের কেউ কেউ তখনো ফিনিশিং লাইন ছুঁয়ে দৌড়ে আসছিলেন। তবে দুই ঘণ্টা আগেই প্রথম দিকের দৌড়বিদরা তাদের দৌড় শেষ করেন।

আহতদের মধ্যে অধিকাংশই দর্শক। এদের কারো হাত-পা, কারো শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, নয়তো গভীর ক্ষত হয়েছে।

ভয়াবহ এই ঘটনাকে অনেকেই সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করছেন। তবে ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলেছেন, আমরা জানি না কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে যেই এর জন্য দায়ী হোক খুঁজে বের করা হবে।

ঘটনার পর বোস্টনে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাবওয়ে সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। বোস্টন পুলিশ সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার কিংবা কোথাও ভিড় না জমানোর অনুরোধ জানিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ওবামা এক তাৎক্ষণিক বার্তায় বলেছেন, “আমরা এই হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনবো।”

কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দফতর বলেছে, এ হামলা অত্যন্ত সংগঠিত ও পরিকল্পিত।

তারা একে সন্ত্রাসী হামলা বলেই জানালেও প্রেসিডেন্ট ওমাবা একে সন্ত্রাসী হামলা বলেননি।

ওবামা বলেন, “আমরা নিশ্চিত করবো কে এই কাজ করেছে এবং কেন করেছে।”

বোস্টন ম্যারাথনের ফিনিশিং লাইনের কাছাকাছি স্থানে বিস্ফোরণ দুটি ঘটানো হয়। প্রথম বিস্ফোরণের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে। বোস্টনের ডাউনটাউন কাপল স্কয়ারে এ দু’টি বোমা বিস্ফোরণের পর গোটা এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

সোমবার সকালে এই ঐতিহ্যবাহী ম্যারাথন শুরু হয়। ২৭ হাজার দৌড়বিদ এই ম্যারাথনে অংশ নেন। বোমা বিস্ফোরণের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে ম্যারাথন শুরু করেন দৌড়বিদরা। শেষের দিকেও অনেকেই যখন তাদের দৌড় শেষ করছিলেন, তখন বেলা পৌনে তিনটার সময় বিস্ফোরণ দুটি ঘটে। এসময় দেখা যায় দৌড়বিদদের কয়েকজনসহ, ম্যারাথনের স্বেচ্ছাসেবী ও সাধারণ দর্শকরা বোমার আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকেন।

এসময় স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত ছুটে এসে আহতদের ঘটনাস্থলেই চিকি‍ৎসা দেন এবং পরে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালগুলো জানায়, তারা এ পর্যন্ত অন্তত ১৪১ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে।

এদিকে বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থল থেকে আরও দুটি অবিস্ফোরিত বস্তু পাওয়া যায়। কারা এর সঙ্গে জড়িত অবিস্ফোরিত বস্তু থেকে ক্লু নিয়ে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে লোকজন সরিয়ে দেয়। পুরো এলাকা সিল করে দেয়।
এদিকে বিস্ফোরণের প্রায় দুই ঘণ্টার মধ্যে বোস্টনের জন এফ কেনেডি লাইব্রেরিতেও একটি বিস্ফোরণ ঘটে।
প্রথমে এ বিস্ফোরণের সঙ্গে ম্যারাথনের ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও পরে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে বৈদ্যুতিক গোলযোগে আগুন লেগে যাওয়ার কারণেই লাইব্রেরিতে বিস্ফোরণটি ঘটে।

জেএফকে লাইব্রেরিতে তৃতীয় বিস্ফোরণের খবর জানায় হাফিংটন পোস্ট।
নিউইয়র্কের একটি রেডিও স্টেশন খবরটি জানিয়ে বলেছে, জেএফকে’র বিস্ফোরণের সঙ্গে বোস্টনের বিস্ফোরণের যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে।

তবে পরে অবশ্য লাইব্রেরির বিস্ফোরণটি বৈদ্যুতিক গোলযোগজনিত বলে জানানো হয়। বোস্টন বিস্ফোরণের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা ছিল না বলেই জানায় সংশ্লিষ্টরা।

প্রাথমিক খবরে ৬ জন আহত হওয়ার কথা জানা গেলেও বিকেলের দিকে আহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। বোস্টন পুলিশ বিভাগের শেষ বিবৃতিমতে আহতের সংখ্যা ১৩০ জন। 

প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে ম্যারাথনের ফিনিশিং লাইনের খুব কাছে একটি দর্শক গ্যালারিতে। পুরো এলাকাটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভিড়ের মাঝখানে ঘটানো হয় দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি। বিস্ফোরণে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকা উড়ে যায়। ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জাতীয় পতাকা পুঁতে রাখা হয়েছিলো রাস্তার দুই পাশে।

সড়ক ছিলো দৌড়বিদদের জন্যই। এছাড়া জরুরি নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা ছিলেন রাস্তায়। রাস্তার পাশে লোহার গ্রিলের বেড়া ভেঙ্গে আহতদের উদ্ধার করতে ছোটেন উদ্ধারকারীরা।

প্রাথমিকভাবে রাস্তার পাশে দৌড়বিদদের জন্য বসানো চিকিৎসা-তাঁবুতে নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের।

ঐতিহ্যবাহী এই ম্যারাথনে ২৭ হাজার দৌড়বিদ অংশ নেন। ম্যাসাচুসেটস-এর দেশপ্রেম দিবসে প্রতিবছর এই ম্যারাথনের আয়োজন করা হয়। দিনটি থাকে রাজ্যের সাধারণ ছুটির দিন।

No comments

Powered by Blogger.