টেলিভিশনে-জনসভায় ঘোষণা দিয়ে জামায়াত নিষিদ্ধ সম্ভব নয়: আশরাফ

টেলিভিশন আর জনসভায় ঘোষণা দিয়ে জামায়াত নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর লালদিঘী ময়দানে ১৪ দল আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘শাহবাগ জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি করছে। তারা দাবি করতেই পারে। তরুণদের দাবির মধ্যে যুক্তি আছে। কিন্তু সরকারের হাত আইন ও সংবিধানের কাছে বাধা। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হলে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হবে।’

কারও নাম উল্লেখ না করে সমালোচনা করে আশরাফ বলেন, ‘কিছু লোক আছেন যারা সবসময়, সব কিছুতে সন্দেহ করেন। অনেকে বলেছিল, আওয়ামী লীগ কিংবা মহাজোট কোনদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেনা, ট্রাইব্যুনাল গঠন করবেনা, বিচারক নিয়োগ দেবেনা। এখন যখন বিচার শুরু হয়েছে, এখন নতুন কথা শোনা যাচ্ছে। এখন বলছেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ড দেবেনা। মৃত্যুদন্ড যখন হয়েছে তখন বলছে রায় কার্যকর করবে না। কিন্তু আমি বলতে পারি, আমরা আইন ও সংবিধান মেনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনদিন দুই কথা বলেনা। বঙ্গবন্ধু কোনদিন দুই কথা বলেনি, তার মেয়ে শেখ হাসিনাও কখনও দুই কথা বলেনা। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করবই, আমরা এ ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের আর নয় মাস সময় আছে। নির্বাচনের আগে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আগামী নয় মাসের মধ্যে সব প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগামী নয় মাসে আমাদের কাজ হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা এবং রায় কার্যকর করা। আমাদের এ লক্ষ্য থেকে আমরা এক চুলও বিচ্যুত হবনা।’

জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে বিদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জার্মানিতে নাৎসি, ইতালিতে ফ্যাসিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছে। এসব পার্টির সদস্যদের দু’বছর করে কারাদন্ড হয়েছে। আমাদের দেশেও আইন পরিবর্তন হয়েছে। কোন দল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ‍অভিযুক্ত হলে সেই দলকে আইনের আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আইনের আওতায় এলে তখন আইনি প্রক্রিয়ায় সেই দল নিষিদ্ধ হবে।’

আশরাফ বলেন, ‘আজ বিএনপি-জামায়াত যা করছে সেটা কোন রাজনৈতিক ‍‌আন্দোলন নয়, সেটা কোন গণআন্দোলন নয়। ভীতু, কাপুরুষরাই একমাত্র চোরাগোপ্তা হামলা করে। কোন বীরের দল, সত্যিকারের ‍রাজনৈতিক দল চোরাগোপ্তা হামলা করেনা।’

তিনি বলেন, ‘ট্রেনে আগুন দেয়া হচ্ছে, রেললাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলা হচ্ছে, এগুলোর মালিক কি শেখ হাসিনা ? এটিএন চ্যানেলের গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, এই চ্যানেলের মালিক কি আমি বা শেখ হাসিনা ? এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। পরীক্ষার্থীরা কি শুধু শেখ হাসিনার ছেলে মেয়ে ?’

তিনি বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হরতাল করছেন আপনারা, হরতাল আরও দেন। এটা আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু হরতালের নামে মানুষ পোড়াবেন না, পুলিশ হত্যা করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘আজ পুলিশকে প্রতিপক্ষ মনে করে যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে এটা বিএনপির মত কোন সভ্য রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। আজ যেভাবে রাষ্ট্র, প্রশাসন ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে, আগামীতে যদি আবারও কোনদিন বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা দেশ চালাবে কিভাবে ? হয়ত খালেদা জিয়া ভাবছেন, তিনি আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। এজন্য তিনি রাষ্ট্র, প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়ে যাবেন। তাহলে আমি বলব, তার রাজনীতি করারও কোন অধিকার নেই।’

আশরাফ বলেন, ‘আসলে খালেদা জিয়ার বুকের ভেতর অনেক ক্ষোভ। তার আদরের দুলাল যুদ্ধাপরাধীদের কেন বিচার হচ্ছে, এজন্য তার সব ক্ষোভ। তত্তাবধায়ক ইস্যু তারা ভুলে গেছে। মনে করিয়ে দিলেও তারা স্মরণ রাখতে চাননা। তাদের সব আন্দোলন শুধু যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য।’

সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন, শিল্পমন্ত্রী ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও সাংসদ মইনুদ্দিন খান বাদল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা.বদিউজ্জামান ডাবলু, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, সাংসদ ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূরুল ইসলাম বিএসসি, সাবেক সাংসদ সুলতানুল কবির চৌধুরী, সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট আবু হানিফ, জাসদ নেতা জসীম উদ্দিন বাবুল প্রমুখ। জনসভা পরিচালন‍া করেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম।

জনসভায় রাশেদ খান মেনন জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, ‘জামায়াত কোন রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি সন্ত্রাসী দল। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কোন সন্ত্রাসী দলের রাজনীতি করার অধিকার নেই। শাহবাগের কথা মেনে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করায় বিএনপিকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’

মেনন লংমার্চ আহ্বানকারী হেফাজতের সমালোচনা করে বলেন, ‘হেফাজত ধর্মের নামে জামায়াতকে রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে। তারা এখন হেফাজতে ইসলাম থেকে হেফাজতে জামায়াতে ইসলামে পরিণত হয়েছে।’

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে আছি, যুদ্ধের ময়দানে থাকব। জামায়াত-শিবিরকে কবর না দেয়া পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে যাবনা।’

জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘হেফাজত ইসলামের বড় হুজুরের কাঁধে প‍াঁচ ভূত বসে আছে। তার কাঁধে বসে থাকা আব্দুর রহমান চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর আত্মীয়। মিজানুর রহমান চৌধুরী গতকাল পর্যন্ত শিবির করেছেন। এম এ হাশেম সাকা মুক্তি পরিষদের সভাপতি। মাহমুদুল হাসান নিজামী রাঙামাটিতে শিবির করতেন। মুফতি হারুন ইজহার নেজামে ইসলাম পার্টি করেন। তিনি জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।’

বাদল বলেন, ‘হেফাজতের লংমার্চের টাকা কারা দিচ্ছে, চট্টগ্রামের যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর পরিবারের টাকায় হেফাজত লংমার্চ করছে কিনা সেটা একটু খোঁজখবর করলে ভাল হবে।’

No comments

Powered by Blogger.