ওয়ান ট্রেড ইউনিয়ন ইসু্যতে চট্টগ্রাম বন্দর উত্তপ্ত, ২ নেতাকে ধোলাই- পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

ওয়ান ট্রেড ইউনিয়ন ইসু্যতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। চলছে একমাত্র বৈধ সংগঠন হিসেবে টিকে থাকার লড়াই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ট্রানজিটের প েবিপ েঅবস্থান।
তাছাড়া ডক ম্যানেজমেন্ট বোর্ড চালু, বন্দর সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন সংস্থার চাকরিচু্যত শ্রমিকদের পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন তো আছেই। আধিপত্য বিসত্মারের চেষ্টায় মরিয়া একাধিক সংগঠনের একই স্থানে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বন্দর এলাকায় ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা। এতে আহত হয়েছে দুই শ্রমিক নেতাসহ অনত্মত ৫ জন। বন্দরে শ্রমিক কর্মচারীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় এবং অবস্থান কর্মসূচীর কারণে প্রায় একঘণ্টার জন্য পণ্য পরিবহন বিঘি্নত হয়।
নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) টেন্ডার বাতিল, কর্মচারীদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু, বিভাগীয় কোটায় ২০ শতাংশ পদোন্নতি, ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধসহ ১০ দফা দাবিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় ছিল বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের একাংশ ও জামায়াত সমর্থিত বন্দর ইসলামিক শ্রমিক সংঘের কর্মসূচী। একই সময়ে প্রায় একই দাবিতে কর্মসূচী ছিল বন্দর জাতীয় শ্রমিক লীগের। উলেস্নখ্য, বন্দরের বিভিন্ন ইসু্যতে প্রায় সমমনা হিসেবে পরিচিত শেখ নুরম্নলস্নাহ বাহার, কাজী জাহাঙ্গীর ও শামসুল হক সফির নেতৃত্বাধীন এ তিনটি সংগঠন নিবন্ধন লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে বন্দর কর্মচারী ইউনিয়নের নামে।
এদিকে, ট্রানজিট প্রদানের সিদ্ধানত্মকে স্বাগত জানিয়ে শ্রমিক সভার কর্মসূচী ছিল বন্দর জাতীয় শ্রমিক লীগের একাংশ, বন্দর শ্রমিক লীগের একাংশ, সিপিবি সমর্থিত বন্দর শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের একাংশের। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী প্রসত্মাবিত বন্দর কর্মচারী পরিষদের ব্যানারে বেলা ১২টায় তাদের কর্মসূচী শুরম্ন হয় বন্দরের চার নম্বর জেটি গেটে। অপরদিকে, সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে আসে বন্দর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকমর্ী ও সমর্থকরা তাদের ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের ল্যে। এ সময় বাদানুবাদের একপর্যায়ে দু'পরে মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বন্দর কর্মচারী পরিষদের প্রতিরোধের মুখে সেখানে ব্যানার নিয়ে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বন্দর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। পরিষদ সমর্থিত শ্রমিকরা হামলে পড়ে ইউনিয়ন সমর্থিত নেতাদের ওপর। সেখানে পিটুনির শিকার হন প্রসত্মাবিত বন্দর কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শামসুল হক সফি এবং সহসভাপতি জামাল উদ্দিন ফারম্নক। তবে সংঘর্ষে কর্মচারী পরিষদের তিনজনও আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয় পরিষদের প থেকে। পরিষদ সমর্থিতরা কর্মচারী ইউনিয়নের শীর্ষ পর্যায়ের দু'নেতা সফি ও জামাল উদ্দিনকে পিছু ধাওয়া করে জুতা-স্যান্ডেল ও লাঠি দিয়ে পেটায়। শেষ পর্যনত্ম আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সহায়তায় তারা এলাকা ত্যাগ করেন। এর আগে সেখান থেকে পালিয়ে রা পান বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক কাজী নুরম্নলস্নাহ বাহার ও জামায়াত সমর্থিত শ্রমিক সংঘের কাজী জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় ছাত্রলীগও। তারাও যোগ দেয় বন্দর কর্মচারী পরিষদের সঙ্গে। বন্দর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বিতাড়িত হবার পর সেখানে অবস্থান নেয় কর্মচারী পরিষদ। বক্তব্য রাখেন পরিষদ নেতা ওয়াহিদ উলস্নাহ সরকারসহ নেতৃবৃন্দ। বক্তারা প্রতিবেশী দেশকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সিদ্ধানত্মের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুনীল আইচ, ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা আবদুল আহাদ প্রমুখ।
বন্দর কর্মচারী পরিষদ নেতা সুনীল আইচ জানান, শ্রমিক সংগঠন সংখ্যা কমিয়ে ওয়ান ট্রেড ইউনিয়ন বাসত্মবায়ন প্রক্রিয়া শুরম্ন হবার পর থেকেই মূলত এ নতুন মেরম্নকরণ। বৈধ সংগঠন হিসেবে টিকে থাকার জন্য নিবন্ধিত হবার চেষ্টায় রয়েছে দুটি প্রসত্মাবিত সংগঠন। তন্মধ্যে পূর্বের নিবন্ধিত জাতীয় শ্রমিক লীগের একাংশ, বন্দর শ্রমিক ইউনিয়ন, বন্দর শ্রমিক লীগের একাংশ ও শ্রমিক দলের একাংশের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে বন্দর কর্মচারী পরিষদ। তিনি বলেন, আমরা দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ট্রানজিট বাসত্মবায়নের প।ে অপরদিকে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রসত্মাবিত বন্দর কর্মচারী ইউনিয়নকে জনবিচ্ছিন্ন দাবি করে তিনি বলেন, তারা পূর্বেও ভুয়া কোম্পানি এসএসএসসহ সকল েেত্র প্রাইভেটাইজেশনের প নিয়ে সাধারণ কর্মচারীদের বিরম্নদ্ধে অবস্থান করেছিল। বন্দরের স্বার্থবিরোধী প্রসত্মাবিত এ সংগঠন বৈধতা পেলে বন্দরের স্বার্থ যেমন বিঘি্নত হবে তেমনিভাবে ভূলুণ্ঠিত হবে সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীদের স্বার্থও।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের প থেকে বলা হয়েছে ট্রানজিটের প েশানত্মিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে ট্রানজিট বিরোধিরা। বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার নিমতলা চত্বরে হাজী মুহাম্মদ মমতাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অহিদ উলস্নাহ সরকার, যুগ্ম সম্পাদক ফখরম্নল ইসলাম, সুনীল আইচ, রফিউদ্দিন খান, ডক বন্দরের গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, আবদুল আহাদ, আবদুর রশিদ চৌধুরী, মীর নওশাদ, মহিউদ্দিন আলমগীর প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ট্রানজিট বাসত্মবায়ন এবং শ্রমিকদের বিভিন্ন স্বার্থ সংক্রানত্ম দাবিতে তাদের শানত্মিপর্ণর্ মিছিলে হামলা চালিয়েছে ট্রানজিটবিরোধী চক্র। শামসুল হক সফি, নুরম্নলস্নাহ বাহার ও কাজী জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে অতর্কিতে এ হামলা চালানো হয়। সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীদের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যনত্ম তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপরে দায়িত্বশীল এক শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রানজিট ইসু্য মূল নয়। বরং ওয়ান ট্রেড ইউনিয়ন বাসত্মবায়ন প্রক্রিয়া শুরম্ন হওয়ায় অসত্মিত্ব রার লড়াইয়ে নেমেছে সংগঠনগুলো। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে চলছে নিবন্ধিত সংগঠন হিসেবে বৈধভাবে টিকে থাকার সংগ্রাম। এ কারণেই বিভিন্ন ইসু্যর নামে এখন বন্দরে শোডাউন ও পাল্টা শোডাউনের কাজটি চলছে। মঙ্গলবারের কর্মসূচীর কারণে বন্দরের একটি মাত্র গেট দিয়ে পণ্য পরিবহন কিছুণের জন্য বিঘি্নত হলেও কোন ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়নি বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.