স্বপ্নের ছোঁয়া মধুটিলা ইকোপার্ক

প্রকৃতির ঘন সবুজে ছেয়ে থাকা সারি সারি গাছের হাতছানিতে প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ। এরপর চারদিকে তাকিয়ে দেখার পথ দেখায় পথই। প্রবেশ পথের ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দু’পাশে রকমারি পণ্যের দোকান।
সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাস্তা। এর পরই অবাক করে হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্যকন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর স্টার ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু-নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণপিপাসুরা। স্বপ্নের ছোঁয়া প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের আধার এর অপর নাম ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’। শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত এই মধুটিলা ইকোপার্ক এখন অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র এবং একটি আধুনিক পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেই সুবাদে এবারের শীত মৌসুমে ভ্রমণপিয়াসীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে মধুটিলা ইকোপার্ক। সীমান্তবর্তী এই পার্কের চারপাশে উঁচু-নিচু পাহাড়ীটিলা আর সবুজের সমারোহ দেখতে ইকোপার্কটিতে এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী ও ভ্রমণপিয়াসীরা ভিড় জমাচ্ছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমশ্চূড়া বনবিটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে এলাকার সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর উদ্যোগে সরকারীভাবে ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’ তথা পিকনিক স্পট। স্থাপনকাল থেকেই শীত মৌসুমে এ পার্কে পর্যটকরা ভিড় করে। ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি পাঁচ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ ৪ হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত ‘মহুয়া’ নামের রেস্ট হাউজ। এ রেস্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জ অফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে­ মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশুপাখির ভাষ্কর্য। আরও আছে ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। ইকোপার্কটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দূরত্ব ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখানে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি খুব কাছে থেকে দেখারও সুযোগ রয়েছে। সরকার প্রতি বছর এ পার্ক থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করলেও পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সে অনুপাতে কোন প্রকার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পার্কের আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ঝুলন্ত ব্রিজ, লেক এক্সটেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

যেভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২শ’ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। অথবা নিজস্ব গাড়িতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সারা বছরই দেশী-বিদেশী পর্যটক ও ভ্রমণপিয়াসীদের ভিড় লেগেই থাকে।


Ñরফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর




সোনাকাটা ইকোপার্ক

পর্যটকপ্রেমীদের দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমতলীর সোনাকাটা ইকোপার্ক। প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার তালতলী ট্যাংরাগিরি বিটে অবস্থিত সোনাকাটা ইকোপার্ক। শত বছর আগে তিন দিক জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত সোনারচরে সমুদ্র থেকে পলি জমে গড়ে উঠেছে সমুদ্র দ্বীপ সোনাকাটা। মোহনা ঘেঁষে আছে সবুজ বেষ্টনী। প্রায় ১০ হাজার একর জমির ওপরে সোনারচরের সমুদ্র সৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আপন মহিমায় মহীয়ান। বর্ষার মৌসুমে জোয়ারের পানিতে সবুজ বেষ্টনী ৫/৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে এক অভূতপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এ সমুদ্র সৈকতের সবই নিরাপদ। একই স্থানে থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। পূর্বেকার নাম ছিল সোনারচর। ২০১০ সালে সোনারচর থেকে সোনাকাটা নামকরণ করা হয়েছে। সোনাকাটার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন শত-শত পর্যটকপ্রেমী এসে সৌন্দর্য উপভোগ করছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা বরগুনা। বরগুনার একটি উপজেলা আমতলী। ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক উভয় পথেই আমতলীতে আসা যায়। সড়কপথে বাসযোগে আমতলী এসে নামতে হবে। আমতলী থেকে বাস অথবা মোটরসাইকেলযোগে তালতলী। তালতলী থেকে মোটরসাইকেলযোগে সোনাকাটা ইকোপার্ক। নদীপথে আসতে হলে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে আমতলী। আমতলী থেকে নদী পথে তালতলী যাওয়ার তেমন কোন ভাল ব্যবস্থা নেই। তাই সড়কপথেই যেতে হবে।

Ñমোঃ হোসাইন আলী কাজী, আমতলী, বরগুনা





পিরোজপুরে রিভার ভিউ ইকো-পার্ক উদ্বোধন

পিরোজপুর শহরের পশ্চিম প্রান্তে বলেশ্বর নদী তীরে শুক্রবার সকালে একমাত্র রিভারভিউ পার্কের উদ্বোধন করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার। এ উপলক্ষে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক অনল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মিহির কান্তি মজুমদার, বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মাহাবুবুর রহমান, পিরোজপুর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ হারুন-অর-রশীদ মজুমদার বক্তব্য রাখেন। বলেশ্বর নদী তীরে বন বিভাগের অর্থায়নে এবং জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ তত্ত্বাবধানে ৬ দশমিক ২৯ একর জমির উপর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ পার্কটি পিরোজপুরের একমাত্র বিনোদনের স্থান।
Ñশফিউল হক মিঠু, পিরোজপুর

No comments

Powered by Blogger.