চোরাই গাড়ির হাট-প্রশাসনই তবে ধর্মের কাহিনী শুনুক!

চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী_ এই আপ্তবাক্যের উপযুক্ততা আরেকবার প্রমাণ করেছে গাজীপুরের সালনা ও পোড়াবাড়ীতে গড়ে ওঠা 'চোরাই গাড়ির হাট' নিয়ে সোমবারের সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী ওই এলাকায় লেগুনা বা হিউম্যান হলার বলে পরিচিত দেশীয় যানবাহন নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠেছিল সময়ের প্রয়োজনেই। নগরীর ভেতরে ও বাইরে ছোট ছোট রুটে এ ধরনের যানবাহন জনপ্রিয় আর সাশ্রয়ীও বটে। এ ধরনের যানবাহন মহাসড়কের জন্য কতটা 'ফিট', তা অবশ্য বিবেচনাসাপেক্ষ। সালনা ও পোড়াবাড়ীর ক্ষেত্রে বড় আপত্তির বিষয় দেশীয় শিল্পের মোড়কে ফেঁদে বসা চোরাই গাড়ির কারবার। জানা যাচ্ছে, একটি চক্র দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ ও চোরাই গাড়ি নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করছে। ভুয়া কাগজপত্রও তৈরি হচ্ছে সেখানে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় চোরাই গাড়ির এমন রমরমা কারবার চলছে কীভাবে? চোর না হয় ধর্মের কাহিনী শুনছে না। পুরনো গাড়ির নতুন রূপান্তর যেখানে বৈধভাবেই একটি শিল্প হয়ে উঠতে পারত, যানবাহন ও যন্ত্রাংশের নবায়ন এবং কর্মসংস্থানের মতো সম্ভাবনা যেখানে ছিল, অসাধু চক্রটি তা কলুষিত করে ফেলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? এখানেই খোদ প্রশাসনের ধর্মের কাহিনী শোনার ব্যাপারটি যুক্ত। সমকালের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখানে তৈরি এবং সংলগ্ন রুটগুলোতে চলাচলকারী লেগুনা থেকে প্রতিদিন কমবেশি ২৫টি যেহেতু হাইওয়ে পুলিশ তাদের কর্তব্য কাজে ব্যবহার করে, সেহেতু একই ধরনের অন্যান্য গাড়ি চলাচলেও তারা বাধা দেয় না। অথচ নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ না পারে এ ধরনের গাড়ি নিজেদের কাছে ব্যবহার করতে, না পারে একই ধরনের অন্যান্য গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিতে। ভুয়া যে কাগজপত্র তৈরি হয়, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ ছাড়া তাও-বা কীভাবে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব? সব মিলিয়ে আমরা মনে করি, গাজীপুরের প্রশাসনেরই উচিত আগে নিয়ম মানা। তাহলেই না তারা অন্যদের নিয়ম মানতে বাধ্য করতে পারবে। চোরাই গাড়ির হাট উচ্ছেদ এবং জড়িত অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নৈতিক বল পাবে।

No comments

Powered by Blogger.