শুভ বড়দিন-প্রেম ও সৌহার্দ্যের বার্তা নিয়ে আসুক

বেথলেহেমের আকাশে একটি উজ্জ্বল তারকার উপস্থিতি দেখে সুদূরপ্রাচ্যের তিন জ্ঞানী ব্যক্তি ধারণা করেছিলেন, বেথলেহেমে মহাপুরুষ যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছে। তিন জ্ঞানী ব্যক্তি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বেথলেহেমে উপস্থিত হয়েছিলেন শিশু যিশুকে অভিনন্দন জানাতে।
ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, এ শিশুই একদিন মানবতার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। বাইবেলের এ বর্ণনা স্মরণ করে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মতিথি উদযাপনে চার্চ ও গৃহের উঁচু স্থানে তারকাসদৃশ আলো স্থাপন করেন। গৃহস্থালিকে আলোকমালায় সজ্জিত করে যিশুর জন্মতিথিকে স্বাগত জানান। আলোক সংকেতের মধ্য দিয়ে জানানো হয়, প্রত্যেক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীর ঘরেই যিশুখ্রিস্টের অধিষ্ঠান। একদিন যিনি অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ থেকে মুক্ত করেছিলেন মানুষকে, যিনি মানুষের সকল শোক, দুঃখের ভার গ্রহণ করে আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেই যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন আজ। যিশুখ্রিস্টের জীবন ও বাণী শুধু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীই নয়, পৃথিবীর মুক্তিকামী শান্তিপ্রিয় মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছে। তিনি প্রেম, সেবা ও সৌহার্দ্যের যে আদর্শ ধারণ করে গেছেন, তা দুই হাজার বছর পরও বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। তার আদর্শ অবলম্বন করে দেশে দেশে মানবহিতকর যেসব উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, দিন দিন তা আরও প্রসারিত হয়ে চলেছে। আর চরম দুঃখ সহ্য করে যেভাবে তিনি নীতি ও আদর্শে অটল থেকেছেন, মানুষের মুক্তির বাণীকে সুউচ্চে তুলে ধরেছেন, তার তুলনাও খ্রিস্টপূর্বকালে বিরল। আমাদের দেশে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন বড়দিন হিসেবে আখ্যায়িত। দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা জাঁকজমকের সঙ্গে যিশুখ্রিস্টের জন্মতিথি পালন করছেন। উৎসবমুখর পরিবেশেই চার্চে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হবে যিশুখ্রিস্টকে। উৎসব-উদযাপনে আনন্দে মেতে উঠবে শিশু-বৃদ্ধ সবাই। ক্রিসমাস ট্রি, ক্রিসমাস ক্যারল, সান্তাক্লজসহ নানা আয়োজন সবাইকে মোহিত করবে। পাশ্চাত্যে এ দিনটি ক্রিসমাস হিসেবে পরিচিত। ক্রিসমাস উপলক্ষে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে রীতিমতো ছুটির উৎসব শুরু হয়। শহর ও গ্রাম, চার্চ ও বিপণি বিতান আলোকমালায় সুসজ্জিত হয়ে ওঠে। তীব্র শীতের মধ্যেও সরগরম হয়ে ওঠে লোকালয়। বিপণি বিতানে উৎসব উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ক্রিসমাসের বিশেষ ছাড়ে ক্রেতারা এতই উৎসাহিত হয়েছেন যে, বিক্রি রেকর্ড ছুঁয়েছে। উৎসব সেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সবাইকে স্পর্শ করে। ক্রিসমাস হয়ে ওঠে সবার উৎসব। আমাদের দেশে উৎসবের বেলায় ব্যতিক্রম না হলেও ক্রিসমাস উপলক্ষে কোনো মূল্যছাড়ের দেখা মেলে না। শুধু ক্রিসমাস কেন, ঈদ-পূজাসহ গুরুত্বপূর্ণ কোনো উৎসবেই মূল্যছাড়ের দেখা মেলে না। বাজারে রীতিমতো মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতাই চলে। বাজারের এ প্রবণতা যে উৎসবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা বলাই বাহুল্য। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পাশ্চাত্যের ক্রিসমাস উদযাপন থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। তবে শুধু বাহ্যিক শিক্ষাই নয়, ক্রিসমাসের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য গভীর ও সুদূরপ্রসারী। আমাদের সমাজ-রাজনীতিতে যেভাবে অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা, অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠেছে, তাতে মানুষের প্রতি প্রেম, সেবা ও সৌহার্দ্যের বাণী বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। বড়দিন সেই মহান বাণীই বহন করে নিয়ে আসে। যিশুখ্রিস্টের শিক্ষা সবাইকে স্পর্শ করলে তা সৌহার্দ্যের পথে সমাজকে এগিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা ও সৌভ্রাতৃত্বের অনন্য আদর্শের মধ্য দিয়ে বড়দিন পালিত হচ্ছে। উৎসবে দেশের চার্চগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোযোগও উল্লেখযোগ্য। আশা করা যায়, এবারও শান্তিপূর্ণভাবে বড়দিন পালিত হবে। বড়দিনের জৌলুসময় উৎসব খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী তো বটেই, সমাজের অন্যদেরও স্পর্শ করুক। আনন্দ, শান্তি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশকে আরও উজ্জীবিত করুক। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা, মেরি ক্রিসমাস।

No comments

Powered by Blogger.