মিয়ানমার যাচ্ছেন ওবামা, প্রশ্নবিদ্ধ ঢাকা! by মাহমুদ মেনন, শিহাবুদ্দীন কিসলু

দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায়ই এশিয়ার দিকে নজর দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সফর করবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও দেশটিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কোনো পক্ষই সফর সম্পর্কে কিছু না জানালেও আগামী ১৮ বা ১৯ নভেম্বর মিয়ানমার সফরে ওবামা আসছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রেস সেক্রেটারি জে কার্নি বাংলানিউজকে জানান সফরকালে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বাণিজ্য ও অংশীদারিত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে কাজের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি ও নিরাপত্তাখাতে সহযোগিতা, মানবাধিকার, পারস্পরিক মূল্যবোধ ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় এসব সফরে গুরুত্ব পারে।

ওবামার এই সফরে মিয়ানমার যুক্ত হওয়া এবং দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাজমান সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে বারাক ওবামার এই সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ ও যোগাযোগ কোনটাই করা হয়নি। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ চালানো ও তাদের অনেকের বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার পরও ইস্যুটিকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে সঠিক ও কার্যকরভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। আর সে কারণেই ওবামার আসন্ন মিয়ানমার সফর থেকে যদি কোনো কিছু অর্জনের সুযোগ থাকে তাহলে তা মিয়ানমারেরই হবে, বাংলাদেশের নয়।

ওবামা ১৭-২০ নভেম্বর ব্যাংক, ইয়াঙ্গুন ও নমপেন সফর করছেন। জে কার্নি বাংলানিউজকে জানান, থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ১৮০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রেসিডেন্ট ওবামা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ইয়াঙ্গুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেখা করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট থিন সেইন ও বিরোধী দলীয় নেতা অং সান সুচির সঙ্গে। এছাড়াও মিয়ানমাদের সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

কার্নি জানান, মিয়ানমারে প্রেসিডেন্ট ওবামার সফরের মূল উদ্দেশ্যেই থাকবে দেশটির গণতন্ত্রায়নের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা আরও দৃঢ় করা। কম্বোডিয়ায় পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা।

কার্নি জানান, শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বারাক ওবামার আলোচনায় অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি, বাণিজ্য ও অংশিদারীত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে কাজের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি ও নিরাপত্তাখাতে সহযোগিতা, মানবাধিকার, পারস্পরিক মূল্যবোধ ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় গুরুত্ব পারে।

এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হাসান ফেরদৌসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেখুন এটি প্রেসিডেন্ট ওবামার পূর্ব এশিয়া সফর। কিন্তু এই সফরে মিয়ানমার সংযুক্ত হওয়ায় কৌশলগত কারণে তা
বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের কিছু একটা করা উচিত ছিলো, কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের যে ঘটনা ঘটে গেছে এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে সে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলতেই বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। এই মত ড. হাসান ফেরদৌসের।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বাংলানিউজকে বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অ্যাডহকভিত্তিতে চলে, ফলে কূটনৈতিক ইস্যুতে কোনো অর্জন সহজ হয় না কিংবা সম্ভব নয়।”

এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে ডেমোক্র্যাটদের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত, রাজনৈতিক সংগঠক ও পরিবেশবিদ ড. মোরশেদ আলমও একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, সফরটি বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার ইস্যুতেই সংশ্লিষ্ট। তবে এ নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে কিছু কাজ করা হচ্ছে না বলেই আমার বিশ্বাস। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও তাদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক মহলে কার্যকরভাবে তুলে ধরা হলে ওবামার মিয়ানমার সফর থেকে বাংলাদেশ কোনো একটি ফল পাওয়া যেতো বলেও মনে করেন ড. মোরশেদ।

No comments

Powered by Blogger.