বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজঃ অজ্ঞতার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ জরুরি

আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়—যক্ষ্মার বিরুদ্ধে অভিযাত্রা : প্রয়োজন উদ্ভাবনী পদক্ষেপ। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এর অন্যতম লক্ষ্য পৃথিবী থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করা। সে লক্ষ্যে অন্যান্য বছরের মতো এবারও নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। প্রতিবছর এক-একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে যক্ষ্মা নির্মূলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।

বর্তমানে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ হলেও বাংলাদেশে গণসচেতনতার অভাবে আশানুরূপ সাফল্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং চিকিত্সক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে রোগ নির্ণয় এবং ওষুধপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা নেই। বহু বছর আগে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনামূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও চিকিত্সা কেন্দ্রগুলোতে এখন যক্ষ্মা চিকিত্সার সুযোগ বেড়েছে। কিন্তু যক্ষ্মা নির্মূলের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে এই রোগটি সম্পর্কে অসচেতনতা এবং চিকিত্সা সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা।
এক সময় যক্ষ্মাকে বলা হতো রাজরোগ, যার কোনো চিকিত্সা নেই। ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা’—কয়েক দশক আগেও এটি ছিল একটি বহুল কথিত জনশ্রুতি। আর এখন বলা হচ্ছে, ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই, এই কথার ভিত্তি নেই।’ চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, আসলেই এই যক্ষ্মা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার ভিত্তি নেই। যক্ষ্মা এখন সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। বর্তমানে ছয় মাস, নয় মাস কিংবা ১২ মাস—এই তিন মেয়াদের চিকিত্সাব্যবস্থা চালু রয়েছে। রোগের সংক্রমণ বুঝে সময়মত এবং নিয়মিত ওষুধ খেলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। অন্যদিকে অনিয়ম হলে তা আরও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। চিকিত্সকদের মতে, যক্ষ্মার ওষুধ অনিয়মিতভাবে সেবন করলে যক্ষ্মার জীবাণু প্রতিরোধ গড়ে তোলে ওষুধের বিরুদ্ধে। তখন প্রচলিত ওষুধে আর ওই জীবাণুকে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। অথচ আমাদের দেশের অনেক রোগী অজ্ঞতাবশত নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন না। কেউ কেউ রোগ সেরে গেছে মনে করে মাঝপথে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন কিংবা টাকার লোভে ওষুধ বিক্রি করে দেন। এমনও শোনা গেছে, অনেকে নাকি কেবল ওষুধ বেচে টাকা পাওয়ার লোভে নিজেকে স্থায়ীভাবে যক্ষ্মাক্রান্ত করে রাখেন। ক্ষেত্রবিশেষে নিজের জীবাণুযুক্ত কফ বিক্রি করেন অন্যের কাছে। ক্রেতারা এই কফ দেখিয়ে তা নিজের বলে পরীক্ষা করিয়ে বিনামূল্যের ওষুধ হাসপাতাল থেকে তুলে বিক্রি করে দেন। চিকিত্সকদের মতে, যক্ষ্মার মতো অসুখ নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চললে চিকিত্সা যত উন্নতই হোক না কেন যক্ষ্মা নির্মূল করা দুরূহ। কাজেই চিকিত্সার পাশাপাশি অজ্ঞতা মোচনও জরুরি।
সব মিলিয়ে যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধের জন্য সরকারকে প্রাথমিকভাবে দুটি পদক্ষেপ নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দেশের সব সরকারি চিকিত্সাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত যক্ষ্মা নিরোধক ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিত্সক নিয়োজিত রাখা; দ্বিতীয়ত, যক্ষ্মা প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরির আরও উদ্যোগ নেয়া। শুধু একটি বিশেষ দিবসে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, র্যালি করে এবং অপর্যাপ্ত লিফলেট, পুস্তিকার মাধ্যমে প্রচারণা সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। এসব উদ্যোগকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। যক্ষ্মার বিরুদ্ধে যে অভিযাত্রার কথা বলা হচ্ছে এবারের বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে বাংলাদেশে তার সঙ্গে আরেকটি তত্পরতাকেও যোগ করতে হবে—তা হচ্ছে, যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াই। এ জন্য কোমর কষে অভিযান শুরু করতে হবে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং চিকিত্সক সমাজকে। পাশাপাশি সচেতন মানুষকেও সেই অভিযানে দায়িত্ব নিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি তা সম্ভব হয় তাহলে এই চিকিত্সা বিপ্লবের যুগে আমরাও যক্ষ্মা প্রতিরোধে সফল দেশগুলোর সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে সক্ষম হব—এমন ভাবা অমূলক নয়।

No comments

Powered by Blogger.