রিক্শা চালিয়ে এইচএসসি জয়

১৮ জুলাই, সকাল ১০টা। এইচএসসির ফলাফল ঘোষণার দিন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. পীযুষ দত্তের অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের ভিড়। হঠাৎ ভিড় ঠেলে কক্ষের ভেতরে ঢুকে পড়েন এক তরুণ। নাম গণেশ চন্দ্র সিংহ। বৃষ্টিতে ভেজা পুরো শরীর। নিজেকে রিক্শাচালক পরিচয় দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে অনুরোধ করেন তার ফলাফল জানানোর জন্য।

এগিয়ে দেন প্রবেশপত্র এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ফটোকপি। কিন্তু তার শিক্ষাবোর্ড দিনাজপুর হওয়ায় কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে অনেক চেষ্টা করেও ফলাফল জানাতে পারলেন না। দুপুরের পর সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে গণেশ জেনে নেন ফলাফল। মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। আশানুরূপ ফল পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন গণেশ।
গণেশের বাড়ি উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা জেলায়। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন গাইবান্ধার হাজী ওসমান গনি ডিগ্রি কলেজ থেকে। পরিবারের হাল ধরতে এক সময় কিশোর বয়সে শুরু করেন রিকশা চালানো। রিকশা চালানোর ফাঁকে চালিয়ে যান লেখাপড়া। এছাড়া তার রোজগারের টাকায় চলছে ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনাও।
চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে গণেশ দ্বিতীয়। বাবা প্রভাত চন্দ্র সিংহ দিনমজুর। বড় ভাই কৃষক। গাইবান্ধায় রিকশা চালিয়ে তেমন আয় না হওয়ায় চার বছর আগে তিনি চলে আসেন চট্টগ্রাম। রিকশা চালিয়েই গাইবান্ধা খোলাহাটি হাই স্কুল থেকে ৪.৮৮ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর গাইবান্ধা দরিয়াপুর এলাকার হাজী ওসমান ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয়।
চট্টগ্রামের খুলশী এলাকার মোস্তফা কম্পানির রিকশা গ্যারেজেই থাকেন গণেশ। নিয়মিত কলেজ না করলেও পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছা দেখে শিক্ষকরা তাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এজন্য গনেশ কলেজের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
এখন লক্ষ্য কি?_জানতে চাইলে গনেশ বলেন, 'যদি কেউ একটু সহায়তা করে আমাকে ভালো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমার আর কিছু লাগবে না। আমি মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।'

No comments

Powered by Blogger.