রাজনীতিতে অকারণ উত্তাপ -বিরোধীদের সইতে হবে, কর্মীদের সামলাতে হবে

সরকারি দল মার দেবে, বিরোধী দল মার খাবে—বাংলাদেশে এটাই যেন হয়ে উঠেছে রাজনীতির প্রধান সূত্র। সরকার বদলায় কিন্তু রাজনীতির এই ধারা যেন কিছুতেই বদলায় না। এই দাপট প্রতিষ্ঠায় সরকারদলীয় কর্মী ও পুলিশের ভূমিকা যেন সহযোদ্ধার। গত এক সপ্তাহে ঢাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় বিএনপির প্রায় কোনো কর্মসূচিই অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। সর্বশেষ ঘটনার সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গত শনিবারের প্রথম আলোয়। ঢাকার পল্লবীর এই ঘটনায় হামলা করেছে যুবলীগ আর বিএনপির ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফলে রাজনীতিতে সংঘাত-উত্তেজনা ফিরে এসেছে, জনগণ হয়ে পড়েছে এই সংঘাতের অনিচ্ছুক দর্শক।
ছাত্রলীগের হামলা থেকে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মতো নাগরিক সংগঠনের গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট মেটানোর দাবির পদযাত্রাও রেহাই পায়নি। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজের সামনে এ রকম একটি পদযাত্রায় হামলা করে মাইক-ব্যানার কেড়ে নেয় ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী একদল সন্ত্রাসী। বিএনপির কর্মসূচিও একই ধরনের হামলার শিকার হচ্ছে। রাজনৈতিক কি অরাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ কি তাহলে থাকবে না?
গণতন্ত্রে বিরোধী দল থাকবে, থাকবে তাদের তৎপরতাও। কারণে কি অকারণে তারা প্রতিবাদী হবে এবং সরকারও তা শুনে বা না-শুনে নিজের কাজ করে যাবে—এটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু বিরোধী দল সড়কে বা ময়দানে নামামাত্রই শুরু হয়ে যায় চর দখলের কায়দায় লাঠালাঠি-মারামারি। পল্লবীর ঘটনায় সিটি করপোরেশনের দুজন কাউন্সিলরসহ বিএনপির ৭৮ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের ভাষায়, তাঁদের অপরাধ হলো রাস্তায় শান্তি ভঙ্গ করা। অথচ তাঁরা সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের দলীয় কার্যালয় থেকে। আর যেখানে রাস্তায় সংঘাতে জড়িয়ে শান্তি ভঙ্গ করেছে দুটি পক্ষ, সেখানে এক পক্ষকে গ্রেপ্তার আর আরেক পক্ষকে প্রশ্রয় দেওয়ায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ ওঠে।
একদিকে অব্যাহত সন্ত্রাস ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের রক্তপাত, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়ার যে চর্চা ছাত্রলীগ-যুবলীগ করে যাচ্ছে, তাতে প্রশ্ন ওঠে, সরকারদলীয় ছাত্র-যুব সংগঠন কি আধিপত্য কায়েম রাখার হাতিয়ার? জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোনো ভূমিকা কি তাদের থাকতে নেই? নিঃসন্দেহে এসব ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন অসহিষ্ণুতার জ্বরে তপ্ত হলে রাজনীতিতে সংঘাতই বাড়বে। বিরোধী দলেরও উচিত, প্রতিবাদকে শান্তির গণ্ডির মধ্যে রাখা; সরকারকে প্ররোচিত করা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের কাজ নয়।

No comments

Powered by Blogger.